২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বরিশালে বিএনপির নেতা মনিরুলের কান্ড …

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

বিজয় নিউজ:; সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কলকাতার মেয়ে মলির পরিচয় বাংলাদেশি মনিরুল আহসান তালুকদারের সঙ্গে। সেখানে দীর্ঘদিন আলাপচারিতা, অতঃপর দুজনের ভালোবাসা। শেষ পরিণতি বিয়ে। বিয়ের আগে স্বামীর কথা মতো ধর্মত্যাগ করেন মলি। নাম রাখেন মলি আহসান তালুকদার। ভালোই চলছিল দুজনের সংসার। এভাবে কেটে যায় প্রায় সাত বছর।

ঢাকার বাসায় থাকতেন মনিরুল। সেই সুবাদে প্রায়ই ঢাকা-কলকাতা আসা-যাওয়া করতেন তিনি। বিভিন্ন প্রয়োজনে মলির কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন। ধার হিসাবে নেয়া টাকাগুলো আর ফেরত দেননি মনিরুল।

গত বছর মনিরুল ভারত থেকে ফিরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মলির সঙ্গে। পরে স্বামীর খোঁজ নিতে বাংলাদেশে আসেন মলি। অনেক কষ্টে মনিরুলের ঠিকানা সংগ্রহ করেন। কিন্তু বাসায় গেলে মলির সঙ্গে খারাপ আচারণ করা হয়। এরপর সেখান থেকে মলি চলে যান কেরানীগঞ্জের নিজ বাসায়।

চলতি বছরের জুলাই মাসে মলির কেরানীগঞ্জের বাসায় এসে যৌতুক হিসাবে ১০ লাখ টাকা এবং তার নামীয় ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করে দিতে বলেন মনিরুল। অন্যথায় তালাক দেবেন বলে হুমকি দেন। মলি অপারগতা প্রকাশ করলে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ ঘটনায় গত ৬ জুলাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১১ (গ) ধারায় একটি মামলা করেন মলি। মামলায় মনিরুল গ্রেফতার হলেও আপস-মীমাংসার শর্তে ১২ দিনের মাথায় জামিন নেন। জামিন পেয়ে মনিরুল এখন লাপাত্তা। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় আছে।

এ বিষয়ে মলি আহসান তালুকদার বলেন, ‘আমি ভারতীয় নাগরিক। প্রেমে পড়ে ধর্মত্যাগ করে মুসলিম হয়ে মনিরুলকে বিয়ে করি। তিনি আমার কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা বিভিন্ন অজুহাতে হাতিয়ে নেন। সেগুলো আর ফেরত দেননি। এখন আবারও তিনি আমার কাছে যৌতুকের জন্য টাকা ও ফ্ল্যাট দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে মামলাটি করেছি। টাকা নয়, স্বামীর অধিকারের দাবি নিয়ে আমি বাংলাদেশে আসি। স্ত্রীর অধিকার চাই, আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিচার চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা চট্টগ্রামের। মা কলকাতার। তাদের দুই জায়গায় বাড়ি রয়েছে। গার্মেন্টসের ব্যবসা করেন বাবা। আমার স্বামী (মনিরুল) বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি পালিয়ে কলকাতায় গাঁ ঢাকা দেন। তখনই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের পরিচয়, অতঃপর বিয়ে হয়। আমি মনিরুলের খোঁজ নিতে বাংলাদেশে এসেছি তিনবার। বিষয়টি সমাজের সচেতন মানুষদের জানানো হলে তারা মীমাংসার কথা বলেন। কিন্তু গত তিন মাসেও কোনো সুরাহা হয়নি।’

মলির আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, মামলার পর ১২ দিনের মাথায় আপস শর্তে জামিন পান মনিরুল। জামিন পাওয়ার পর তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) জহিরুল ইসলাম  বলেন, ‘মলির অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা মামলার আসামি মনিরুলকে গ্রেফতার করি। আদালতে রিমান্ড চেয়ে প্রেরণ করি। আদালত রিমান্ড দেননি। এরপর আদালতের মাধ্যমে তিনি জামিন পান। মামলাটি তদন্তাধীন। গুরুত্বসহকারে মামলাটির তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পর বোঝা যাবে আসল ঘটনাটি কী?’

মামলার অভিযোগে মলি উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন ভারতীয় নাগরিক। আমার বাবা বাংলাদেশের গার্মেন্টস সামগ্রী ভারতে নিয়ে গিয়ে ব্যবসা করতেন। আমি আমার বাবার ব্যবসা পরিচালনা করতাম। সেই সুবাদে মনিরুলের সঙ্গে ২০১২ সালে পরিচয়। পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে তার সঙ্গে ২০১৩ সালে ভারতে বিয়ে হয়। আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করি। বিয়ের পর মনিরুল আমার সঙ্গে থাকত এবং আমার ব্যবসা পরিচালনা করত। মাঝে মধ্যে সে বাংলাদেশে আসত। বিবাহের তিন বছর পর আমি জানতে পারি যে, তার স্ত্রী-সন্তান আছে। পরে আমি আমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার সঙ্গে সংসার করতে থাকি। তার ছেলে আসিবুল আহসান আজমকে (১১) ২০১৬ সালের শেষের দিকে ভারতে নিয়ে যায়। আসিবুল আমার সঙ্গে থাকত। আমি তাকে পড়ালেখার জন্য দার্জেলিংয়ে ভর্তি করি। আসিবুলের যাবতীয় দেখভাল করতাম আমি। আমরা দুজন মিলে ছেলের স্কুলের খরচ বহন করতাম।’

মলি আরও উল্লেখ করেন, ‘আসিবুলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি আমার দাম্পত্য জীবনে আর কোনো সন্তান নেইনি। ২০১৭ সালে মনিরুল ভারতে থাকাবস্থায় তার সংসারিক প্রয়োজনে নগদ ভারতীয় ২০ লাখ রুপি ধার নেয় আমার কাছ থেকে। এমনকি মনিরুলের মেয়ের বিয়ের সময় ১৪ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ধারস্বরূপ নেয় আমার কাছ থেকে। মনিরুল মাঝে মধ্যে বাংলাদেশে আসত এবং ভারতেও যেত। গত দুই বছর আগে আমি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করি। সর্বশেষ মনিরুল ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর আমাকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বাংলাদেশে আসে। ২০২০ সালের ১৩ মার্চ আমি বাংলাদেশে এসে তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করি। কিন্তু সে আমাকে তার বাসার ঠিকানা দেয়নি। পরবর্তীতে আমি তার বর্তমান বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে সেখানে যাই। সে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে সে আমার কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি এবং আমার ভরণপোষণও দেয়নি। আমি আমার বাসা থেকে ব্যবসা পরিচালনা করি। ২০২০ সালের ২ জুলাই মনিরুল আবার আমার বাসায় এসে যৌতুক হিসাবে ১০ লাখ টাকা এবং আমার নামীয় ফ্ল্যাট তার নামে রেজিস্ট্রেশন করে দিতে বলে। অন্যথায় আমাকে তালাক দেবে বলে হুমকি দেয়। আমি অপারগতা প্রকাশ করলে সে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মারপিট করে নীলাফুলা জখম করে। আমাকে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বলে। ভারতে না গেলে আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় মনিরুল।’

103 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন