২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বুড়ো হওয়ার ফেসঅ্যাপে বিপদের গন্ধ!

আপডেট: জুলাই ১৯, ২০১৯

চেহারাকে বুড়ো করতে ব্যবহার করা মোবাইল অ্যাপলিকেশন ফেসঅ্যাপ ব্যবহার করতে নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে সৌদি আরব। রুশ নির্মিত এই অ্যাপে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পোল্যান্ড ও ইউরোপের পার্শ্ববর্তী লিথুনিয়াও।-খবর এএফপি ও আরব নিউজের

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টিও এই অ্যাপ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের বুড়ো বয়সের সেলফি আপ করে মজা পাওয়ার জন্যই বিশ্বজুড়ে অ্যাপটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য এই সফটওয়্যার হাতিয়ে নিচ্ছে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

অ্যাপটিতে নিজের ছবি আপলোড করে তা বুড়োতে রূপান্তর করা যায়। সামাজিক মাধ্যমে কোটি কোটি ব্যবহারকারী এই অ্যাপটি দিয়ে নিজেদের ছবি বুড়ো করে তা টাইমলাইনে আপ করছেন।

এখন পর্যন্ত শতাধিক দেশে এটির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিশ্লেষকরাও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া তথ্য যেকোনো সময় অপব্যবহার হতে পারে।

কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ খুররাম খান বলেন, এ সময়ে কিছু অ্যাপসের ভেতর নাক ডুবিয়ে রাখতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। মূলত এগুলো বিনোদন কিংবা মজা পেতে ব্যবহার করা হয়।

‘কিন্তু এসব যে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে, তা নিয়ে কারও মাথায় ব্যথা দেখা যায় না।’

তিনি বলেন, এসব অ্যাপে আপ করা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ধ্বংসাত্মক কোনো কাজেও ব্যবহার করা হতে পারে যে কেউ।

ফেসঅ্যাপ মূলত চেহারাকে বুড়োতে রূপান্তর করার অ্যাপ। এ রকম বহু অ্যাপ রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ ব্যবহার করছেন। এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে গিয়ে তার নীতিমালা কিংবা নিজেদের অধিকারের বিষয়টিও খেয়াল রাখা হয় না সাধারণত।

এই সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ফেসঅ্যাপের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নীতিমালা পরিষ্কার না। এটা ব্যবহারকারীদের তথ্যের সুরক্ষা দেবে কিনা, তাও অনিশ্চিত।

তিনি বলেন, কিন্তু কোম্পানিটি দাবি করছে, এখান থেকে সংগ্রহ করা তথ্য কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হবে না।

অ্যাপটি স্পষ্টভাবে বলছে, বিজ্ঞাপন অংশীদার তৃতীয়পক্ষের কাছে তারা তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করছে। এটা মজা করার জন্য কেবল একটি ছবিই আপ করে না; বরং ফেসঅ্যাপের শর্তাবলীতে ব্যবহারকারীর ফটো স্টোরের সব ছবিতে ঢুকে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না, কখন, কার সঙ্গে এসব তথ্য শেয়ার করা হবে কিংবা কেউ তা অপব্যবহার করবে কিনা। কাজেই ফেসঅ্যাপ ব্যবহারের এই প্রবল অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।

অতীতে ক্যান্ডি ক্রাশ ও অ্যাংরি বার্ডস লোকজনের ব্যক্তিগত তথ্য নিজেদের স্টোরে জড়ো করতো। স্মার্টফোন থেকে বিশেষ করে ফোন নম্বরের তালিকা, ইমেইল ও অন্যান্য স্পর্শকাতার তথ্যে ঢুকে পড়তো এসব অ্যাপস।

খুররাম খান বলেন, ব্যবহারকারীদের বড় বিপদের উৎস হচ্ছে তথ্য-ফাঁসসহায়ক অ্যাপসগুলো। স্মার্টফোনে এসব ডাউনলোড করার সময় ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশের সুযোগ দিতে হয়। তখন এগুলো লোকজনের তথ্য, নথি, ছবি, মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে।

বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ১০ কোটি লোক গুগল প্লে স্টোর থেকে নিজের স্মার্টফোনে এই ফেসঅ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। এটিতে ছবি আপলোড করে চেহারায় পরিবর্তন, ঠোঁটে হাসি জুড়ে দেয়া এবং লিঙ্গও পরিবর্তন করা যায়।

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপের তকমা পেয়েছে ফেসঅ্যাপ। বছর দুয়েক আগে এটি চালু করা হলেও সর্বশেষ সম্পাদনা টুলের জন্যই ভাইরাল হয়েছে নতুন করে।

মস্কোর নিকটবর্তী প্রযুক্তি কেন্দ্র স্কোলকোভোভিত্তিক উইয়ারলেস ল্যাব এটির উদ্ভাবক। স্কোলকোভোকে বলা হয় রাশিয়ার সিলিকন ভ্যালি।

ফেসব্যাপের প্রধান নির্বাহী ইয়ারোস্লাভ গনচারোভ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ব্যবহারকারীদের তথ্যে রুশ কর্তৃপক্ষের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। একটি ছবি আপলোড হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেটি মুছে যায়। কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহকারীদের ছবি কাজে লাগানো হচ্ছে না এখানে।

পোল্যান্ডের ডিজিট্যাল কার্যক্রম মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে ব্যবহারকারীদের বুড়ো হওয়ার ছবির বন্যা নেমেছে সামাজিক মাধ্যমে। এতে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষায় ঝুঁকির কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

মার্কিন সিনেটে সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার বুধবার এই অ্যাপ নিয়ে সতর্কবাণী দেন। এতে জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সম্ভাব্য ঝুঁকি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই ও বাণিজ্য কমিশনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

70 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন