২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালে বন্যা নদীভাঙ্গনের আতংকে হিজলাবাসী॥প্রতিকারের ব্যবস্থা নেই

আপডেট: জুলাই ২, ২০২০

দক্ষিণ পশ্চিম বাউশিয়া গ্রাম নতুন করে এভাবেই ভাংছে, কোষ্টগার্ড পল্টুন, রাস্তার মাথার গ্রামের দৃশ্য।

সাইফুল ইসলাম:: সম্প্রতি পানি বন্যা, পাহাড়ি ঢল মেঘনায় ঢুকতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে মেঘনার চাঁদপুর মোহনায় ছেড়ে হিজলায়। বেপরোয়া ভাঙতে শুরু করছে হিজলা, তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। আতংক বিরাজ করছে হিজলার মেঘনা পাড়ের সাধারণ মানুষের মনে। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই।

সরকারিভাবে হিজলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস নেই। এখানকার মানুষ জানে না পানি বৃদ্ধির সংবাদ, আাগম নদী ভাঙার খবর। আগাম পানি বৃদ্ধির কারণে হিজলা উপজেলার পার্শ্ববর্তী মেঘনা এখন বেপরোয়া ভাবে ভাঙ্গনের শুরু হয়েছে। একের পর এক বাড়ি এখন মেঘনা গিলে ফেলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা তাও জানা নেই উপজেলা প্রশাসনের বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। উপজেলা পরিষদের খুব কাছে প্রমত্তা মেঘনা। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে উপজেলাটি শরিয়তপুরের “নরিয়া উপজেলার” ন্যায় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।

এমন মত সাধারণ মানুষের। বিগত বছরে মেঘনার মুল মোহনা পুরাতন হিজলা লঞ্চঘাট থেকে বাউশিয়া হয়ে দড়িচর-খাজুরিয়া (বামনেরচর) পর্যন্ত বেপরোয়া ভাবে ভাঙছে। একের পর এক গ্রাম, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, বাজার গিলে ফেলেছে মেঘনা। হিজলা উপজেলার মানচিত্র বদলে দেয়েছে প্রমত্তা মেঘনা।
বর্তমানে দেশের মধ্যাঞ্চলে পানি বন্য শুরু হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ, মাদারিপুর,শরিয়তপুর তলিয়েগেছে। আঘাতহানছে শরিয়তপুর লাগোয়া হিজলার মেঘনায়।
২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বাউশিয়া স্থান পরিদর্শন করলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুরাতন হিজলা লঞ্চ ঘাট এখন গাছে বাঁধা, একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দ-ায়মান মেঘনার পাড়ে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৫ (পাঁচ) একর জায়গার সিংহভাগ নদীগর্ভে বিলীন।

প্রস্তাবিত হিজলা- মেহেন্দিগঞ্জ ফেরিঘাট-কোরবানের রাস্তার মাথার স্থাপনা এখন আর নেই। বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার জন্টু হাওলাদার জানান, দক্ষিণ বাউশিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম বাউশিয়া, মধ্যবাউশিয়া সরকারি প্রাঃবিঃ, একটি ব্রিজ, হাফেজি মাদ্রাসা হুমকীর মুখে। এগুলো নিরাপদে সরানোর জন্য চেয়াম্যানের সাথে পরিষদে মতবিনিময় হয়।

প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, আমরা বিগত বছর থেকে ঝুকিতে রয়েছি। এ বছরের কথা জানি না, কর্তৃপক্ষকে অবগত করছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঃ গাফ্ফার জানান, তিনি নিজে ঐ স্থান পরিদর্শন করেন। নদী আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই সাথে বাস করছে। বলতে গেলে উপজেলাইতো ঝুকির মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সাথে আলোচনা চলছে।

উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন টেকের বাজার এখন মেঘনা পাড়ে। হুমকীর মুখে খান পরিবার, ফকির বাড়ি, সরদার বাড়ি, মোল্লাবাড়ি, হাওলাদার বাড়ি। ইতোমধ্যে সালাউদ্দিন খানের বাড়ি সহ ১০/১২টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে,নদীতে গিলে ফেলেছে। রফিক খান, কাইয়ুম খান এখন নদীর মধ্যে বসবাস করছেন, কোথায় যাবেন তা এখনও নিশ্চিত করতে পারছে না তিনি। তাদের দাবি জনপ্রতিনিধিরা তাদের দিকে মুখ তুলে তাকাচ্ছে না। ঐতিহ্যবাহী ফকিরবাড়ির ঐতিহ্য শুপারির বাগান নদীতে গিলে খাচ্ছে। হাহাকার ঐ শতবছরের পুরাতন বাড়ির মালিকদের। রু¯‘ম ফকির আক্ষেপ করে জানান, এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বড়জালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এরা কেউ তাদের দিকে তাকাচ্ছে না। ঐ স্থানও এখন মেঘনার পেটে। নামকাওয়াস্তে বাউশিয়া অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা বিগত বছরেই মেঘনা তার পেটে নিয়েগেছে।

এখন আবার ভাঙতে শুরু করছে। পুরাতন হিজলা বাজার আগেই নদীগর্ভে বিলীন, ৬ হাজার ভোটারের গ্রাম বাউশিয়া এখন স্মৃতি। সব মেঘনার পেটে। এখন বর্ষা, আবারও ভাঙতে শুরু করেছে। হিজলার একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় “হিজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” এখন মেঘনার পাড়ে। উপজেলা প্রশাসনিক ভবন, উপজেলা পরিষদ, টেকের বাজার এখন ভাঙনের অপেক্ষায়, ডাকছে মেঘনায়।

রাক্ষুসের পেটে পুরো বাউশিয়া গ্রাম।
বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পন্ডিত শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ জানান, বাউশিয়া, বাহেরচর গ্রাম তিনটি রাক্ষসী মেঘনার হাত থেকে রক্ষার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে মোটেও সম্ভব না। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন স্থান পরিদর্শন করেন। নতুন বছর হিজলা উপজেলা পরিষদকে কতটুকু নিরাপদ মনে করছেন, এমন প্রশ্নে তিনি জানান- মোটেও নিরাপদ না।

273 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন