২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

১২ ভারতীয়কে ধর্মান্তকরণ করেননি আজহারী কেন ?

আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২০

বিজয় নিউজ:: বাংলাদেশে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যক্তিত্ব মিজানুর রহমান আজহারী।

বিশেষকরে গত ২৪ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় তার একটি মাহফিলে ১২ জন ভারতীয় নাগরিকের ধর্মান্তকরণ নিয়ে চলা বিতর্ক থামছেই না।

পরিবারটিকে ধর্মান্তরিত করার ক্ষেত্রে জোর করা হয়েছে কিনা বা এটি সাজানো ঘটনা ছিল কিনা–এসব নানা প্রশ্নে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এরইমধ্যে জানা গেল ওই ১২ জন ভারতীয় ড. মিজানুর রহমান আজহারীর কাছে কালেমা পড়ে মুসলমান হননি। আজহারী তাদের কালেমা পড়াতে অপারগতাই জানিয়েছিলেন। তখন অন্য এক আলেমের মাধ্যমে কালেমা পড়ে ইসলামে দিক্ষিত হন তারা।

গণমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে এমনটাই জানিয়েছেন ওই মাহফিলের আয়োজকদের অন্যতম মোহাম্মদউল্লাহ।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ওই ১২ ভারতীয় ইসলামি বক্তা মাওলানা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর কাছে ধর্মান্তরিত হতে চেয়েছিলেন। আমরা তাদের আর্জি আজহারী সাহেবকে বলি। কিন্তু আজহারী সঙ্গেসঙ্গে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এটা খুশির খবর। কিন্তু দুঃখিত যে, ধর্মান্তরিত করার বিষয়ে আমি আপনাদের কোনো সহযোগিতা করতে পারব না।

মোহাম্মদউল্লাহ আরো বলেন, আজহারী প্রস্তাবটি না গ্রহণ করায় আমরা আরেকজন আলমকে দিয়ে ঐ পরিবারকে কালিমা পড়াই।

মিজানুর রহমান আজহারী কেন এমন ধর্মীয় বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন প্রশ্ন করা হলে মোহাম্মদউল্লাহ বলেন, কিছুদিন আগে আজহারীর এক মাহফিলে একজন হিন্দু নারী ইসলামের ছায়াতলে এসেছিলেন। কালেমা পড়তে ওই নারী স্টেজে উঠে আজহারীর নিকটবর্তী হন। বিষয়টি দৃষ্টিকটু বলে মনে হয়েছে অনেক আলেমের। পরে বিষয়টি নিয়ে কঠিন সমালোচনার স্বীকার হন আজহারী। তাই এমন বিষয় থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন আজহারী।

ওই পরিবারটি যে ভারতীয় তা কি আজহারী জানতেন? এমন প্রশ্নে মাহফিলের আয়োজক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, না, আজহারী বা মাহফিলের আয়োজকরা তাদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে জানতেন না। পরিবারটির কর্তা মাহফিলের একদিন আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। পরদিন তারা এফিডেভিট এর কপিসহ আইনজীবী নিয়ে মাহফিলে এসেছিলেন। তাদের আইনজীবী ধর্মান্তরিত হওয়া সর্ম্পকিত সেই এফিডেভিট মাহফিলে পড়ে শোনান। তাদের তো জোর করে এখানে এনে ধর্মান্তরিত করা হয়নি। তাদের ইচ্ছাই ছিল যে, লক্ষাধিক জনতার সামনে ইসলাম গ্রহণ করবেন।

মোহাম্মদ উল্লাহর মতো বিবিসেকে একইরকম তথ্য দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার এ এইচ এম কামরুজ্জামান। তিনি বলেছেন, কেউ তাদের জোর করে ধর্মান্তরিত করেছে, এমন তথ্য আমরা পাই নি। কেউ বাধ্য করলে তখন আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতাম।

তবে বিষয়টি ধর্মান্তরিত করণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় জানিয়ে পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, তাদের ধর্মান্তরিত হওয়া না হওয়া আমাদের কাছে বিষয় ছিল না। তারা ভারতীয় নাগরিক হয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ছিল এটাই আমাদের কাছে বড় বিষয়। সেদিকেই ফোকাস করেছি আমরা।

২ সদস্যের ধর্মান্তরিত পরিবারটির প্রধান হচ্ছেন মনির হোসেন। এর আগে ভারতে তিনি পরিচিত ছিলেন শংকর অধিকারী নামে।

ওই পরিবারের বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গত বছরের আগাষ্ট মাসে দুই মাসের ভিসা নিয়ে পরিবারটি বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।

তিনি বলেন, “পরিবারটির কর্তা মনির হোসেন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। কিন্তু স্থানীয় ও তাদের পরিবার বলছে, খুব ছোটবেলায় টঙ্গীর ইজতেমা দেখতে এসে হারিয়ে যান মনির। এরপর কিভাবে যেন ভারতে চলে যান তিনি। সেখানে এক হিন্দু পরিবারে বড় হয়েছেন এবং হিন্দু নারী বিয়ে করে সংসার করছিলেন। ভারতে তার নাম শংকর অধিকারী। শংকর ওরফে মনিরের স্ত্রী দুইজন এবং দুই ঘরে সন্তান সংখ্যা আটজন। একজন নাতিও আছেন। তাদের সবার পাসপোর্ট ভারতীয়। বেনাপোল বন্দর দিয়ে পরিবারটি বাংলাদেশে এসেছিলেন।

বেনাপোল বন্দর দিয়েই ফের তাদের ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া গ্রামে হাজীপুর পাটোয়ারীর বাড়িতে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে একই পরিবারের মোট ১২ জন সদস্য একসঙ্গে ইসলামে দীক্ষা নেয়।

তার মুসলমানই ছিলেন মন্তব্য করে বিষয়টি সাজানো নাটক বলে অপপ্রচার চলে। এরইমধ্যে জানা যায়, ওই ১২ জন ভারত থেকে এসেছেন।

পরে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

রামগঞ্জ উপজেলার ৫নং চণ্ডীপুর ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার মো. ইব্রাহিম মিয়া বলেন, মনির হোসেন ইছাপুর ইউপির সংরক্ষিত মেম্বার ফাতেমা বেগমের বড় ছেলে এবং দক্ষিণ নারায়নপুর আ. হাই ডাক্তার বাড়ির মজিবুল হকের ছেলে হলেও কয়েক মাস যাবত হরিশ্চর গ্রামের হাফেজ আয়াত উল্যাহর বসত ঘরে ভাড়া থাকত।

98 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন