২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

লেবাননে নবগঠিত সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত

আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২০

ওয়াসীম আকরাম, লেবানন থেকে:: লেবাননে চলমান আন্দোলনের মুখে নতুন সরকার গঠন করলেও নবগঠিত সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিক্ষোভরত আন্দোলনকারীরা।

কয়েকদিন ধরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে রাজধানী বৈরুতের অফিসিয়াল, ব্যবসায়ী এবং সংসদীয় এলাকা ডাউনটাউনে।

আইন শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ হচ্ছে আন্দোলনকারীদের। দোকানপাট, অফিস ভাঙ্গচুরসহ আইন শৃংখলা বাহিনীকে লক্ষ করে নিক্ষেপ করছে ইটপাটকেল।

এদিকে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে আইন শৃংখলা বাহিনীও জলকামান ও ক্বাদানি গ্যাস ব্যবহার করছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, গোত্রভিত্তিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে, নতুন নির্বাচন চান তারা। বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর তারা আস্থা রাখছেন না বলে জানান।

লেবানন ধর্ম ও গোষ্ঠীগতভাবে বিভক্ত একটি রাষ্ট্র। এখানে খ্রিস্টান, সুন্নী মুসলমান ও শিয়া মুসলমানেরা একত্রে বাস করেন। গোষ্ঠীগুলি লেবাননের ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার ব্যাপারে চুক্তি বা সংবিধান করেছেন।

সংবিধান অনুযায়ী লেবাননের রাষ্ট্রপতি হবেন একজন ম্যারোনীয় খ্রিস্টান, প্রধানমন্ত্রী হবেন সুন্নী মুসলমান এবং স্পিকার হবেন শিয়া মুসলমান।

সংসদের আসনসমূহের অর্ধেক খ্রিস্টান ও অর্ধেক মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত। লেবাননের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল গোষ্ঠী বা গোত্রভিত্তিক।

কিন্তু এই সংবিধান থেকে বের হতে চান লেবাননের জনগন। তবে এই দাবি মানতে নারাজ রাজনীতিবিদরা।

নবগঠিত নতুন সরকার সম্পর্কে আন্দোলনকারীরা বলেন, মন্ত্রী সভার চেয়ারের লোকগুলো পরিবর্তন হলেও, যারা এসেছে তাদের সবাই একই দলীয় লোক, যারা লেবাননের অর্থনৈতিক অচল অবস্থার জন্য দায়ী। তাদের নির্দেশে নতুন মন্ত্রীপরিষদ গঠন হয়েছে। কাজেই তাদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা অর্থহীন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে, নবগঠিত সরকারকে একটু সুযোগ দিয়ে দেখা যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারীরা বলেন এদের আর কোন সুযোগ দেয়া হবেনা। আর যতক্ষণ পর্যন্ত সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সবাই সরে না যাবে, ততক্ষন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানান আন্দোলনকারীরা।

প্রসঙ্গত, প্রায় তিন মাস অপেক্ষা শেষে সংঘর্ষ ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে নবগঠিত সরকার গঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন দেশটির সাবেক শিক্ষামন্ত্রী হাসান দিয়াব। তিনি দেশটির রাজনৈতিক ও আধাসামরিক প্রতিষ্ঠান হিজবুল্লাহ সমর্থিক ব্যক্তি। প্রায় এক মাস ধরে মতবিরোধের পর দেশটির মন্ত্রিসভার তালিকায় প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে হাসান দিয়াবকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়।

হাসান দিয়াবের নেতৃত্বে নবগঠিত সরকারের অধীনে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট বাড়িয়ে ২০ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন হয়েছে।

লেবানন সরকার বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনের জেরে ২৯ অক্টোবর আন্দোলনের ১৩ দিন পর প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন সাদ হারিরি।

হাসান দিয়াবকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার একদিন আগে একটি টুইট করেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। সোমবার টুইটে তিনি লেখেন, লেবাননে জরুরি ভিত্তিতে একটি নতুন সরকারের দরকার যা দেশকে তার ধসের চক্র থেকে বের করে আনতে পারে। একদিন পর দিয়াবের নবগঠিত সরকারকে একটি উদ্ধারকারী দল বলে আখ্যা দেন তিনি।

অন্যদিকে নবগঠিত সরকার গঠনের পর অর্থনৈতিকসহ সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত করে আনাই হাসান দিয়াবের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতারা।

99 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন