১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

রাজাকারের তালিকায় অসঙ্গতি:ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা দায়ীদের শাস্তি চান

আপডেট: ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯

বিজয় নিউজ:: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের প্রথম তালিকায় এমন সব ব্যক্তির নাম এসেছে, যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন।
এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যদের নামও রয়েছে তালিকায়। অথচ তালিকায় নেই চিহ্নিত অনেক রাজাকারের নাম। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলেছেন, অশুভ চক্র পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করেছে শুভ উদ্যোগকে বানচাল করার জন্য। স্বাধীনতাবিরোধীদের এজেন্টরা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে রয়েছে। তারাই এ কাজ করেছে। অবিলম্বে এজেন্টদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নাম থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মঙ্গলবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ব্যাপকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেলে তালিকা প্রত্যাহার করা হবে।
আর দুই-একশ নাম ভুল হলে সংশোধন করা হবে। তবে ওই ভুলের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায় অস্বীকার করেছেন তিনি।’ মন্ত্রী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তালিকা হুবহু প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।’

তালিকায় অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির যুগান্তরকে বলেন, ‘তালিকা দেখে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এই তালিকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন তালিকা কীভাবে হল, সেটিই প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। নির্মূল কমিটি প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে প্রকাশিত তালিকার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।’

বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরামের মহাসচিব শব্দসৈনিক হারুন হাবীব বলেন, ‘আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধচর্চার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তারা সবাই স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর প্রকাশিত তালিকাকে স্বাগত জানিয়েছি।

কিন্তু তালিকার অসঙ্গতি সবাইকে হতচকিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের স্বার্থে, নতুন প্রজন্মের সামনে সত্য প্রকাশের স্বার্থে এই তালিকা প্রকাশের প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু তালিকায় এমন কিছু নাম এসেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। এতে একটি সংকট তৈরি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একই নামে একই এলাকায় একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে নাম ব্যবহারের আগে তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। যাতে একজনের স্থানে আরেকজনের নাম প্রকাশিত না হয়।’

সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। এগুলো হল- এক. যারা এই কাজে যুক্ত থেকে এসব ভুল প্রকাশ করেছেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।

দুই. মুক্তিযুদ্ধে শুধু রাজাকাররাই বিরোধিতা করেননি, সেই সঙ্গে যুক্ত ছিল আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা। তাদের সবার নাম অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যেন পূর্ণাঙ্গ ও সংশোধিত তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব শফিকুল বাহার মজুমদার টিপু বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর হলেও রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করায় সরকারকে অভিনন্দন।
তালিকায় যদি ভুল থাকে, যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকে, তা অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরেজমিন তদন্ত করে তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সঠিক তালিকা প্রকাশ হোক। এটা কমান্ড কাউন্সিলের মাধ্যমেই সঠিকভাবে প্রণয়ন করা সম্ভব। কারণ কামান্ড কাউন্সিলের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল। কিন্তু আড়াই বছর ধরে কমান্ড কাউন্সিলের কোনো কমিটি না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনের কর্মচারীদের হাতে কমান্ড কাউন্সিলের দায়িত্ব। তাই আমাদের এ বিষয়ে কথা বলার বা কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।

কাউন্সিলের কার্যক্রম না থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা আজ পদে পদে উপেক্ষিত। কমান্ড কাউন্সিলের দায়িত্ব যাদের দেয়া হয়েছে, তারা কেউ মুক্তিযোদ্ধা নন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের জন্ম হয়নি, তারাও কমান্ড কাউন্সিলের দায়িত্বে।’

112 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন