১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং প্রোগ্রামে জমজমাট শিক্ষা বাণিজ্য

আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০১৯

ইভিনিং মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের নামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডিগ্রি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। নামমাত্র পরীক্ষা কিংবা কোনো পরীক্ষা ছাড়াই এসব কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

এরপর মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে একটা সময় পর শেষ করা হয় তাদের শিক্ষাজীবন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নকলের সুযোগ দেয়া হয় বলেও অভিযোগ আছে। ক্লাস না করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও আছে।

এ প্রক্রিয়ায় ‘বিকল্প পথে’ নিম্নমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়। সুবিধাভোগী বাদে বেশিরভাগ শিক্ষক এ কোর্সের বিপক্ষে। নানা অভিযোগে এ ধরনের প্রোগ্রাম বাতিল করার পরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় সুবিধাভোগী শিক্ষকদের চাপে ফের চালু করতে বাধ্য হয়েছে।

অভিযোগ আছে, ইভিনিং মাস্টার্স কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশই নিয়মিত কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদনেরই যোগ্যতা রাখেন না। কিন্তু এক শ্রেণির শিক্ষকের অর্থের লোভের কারণে এ ধরনের ছাত্রছাত্রীরাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনে যাচ্ছেন। ওই শ্রেণির শিক্ষকরা নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে উদাসীন। কেউ ক্লাস ফাঁকি দেন।

আবার কেউ পরীক্ষার খাতা নিয়ে দিনের পর দিন ফেলে রাখেন। অথচ এ ধরনের শিক্ষকরাই ইভিনিং মাস্টার্স কোর্সে বেশি সক্রিয়। এতে শিক্ষকের ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ও গবেষণাও হচ্ছে বিঘ্নিত। যার সার্বিক প্রভাব পড়ছে দেশের উচ্চশিক্ষার মানে।

সরকারের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিনে ‘সরকারি’ আর রাতে ‘বেসরকারি’ চরিত্রে রূপান্তরের কারণে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইভিনিং মাস্টার্স প্রোগ্রাম নিয়ে খোদ চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উদ্বিগ্ন।

গত ৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে তিনি ডিপ্লোমা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোর্স নিয়ে ভাবার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। এর আগে ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাতে গেলে রাষ্ট্রপতি তাদেরও ইভিনিং কোর্সের ব্যাপারে নিজের অবস্থানের কথা জানান।

অক্টোবরের সমাবর্তনে ইভিনিং কোর্সের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ডিপ্লোমা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের পাশাপাশি স্বাভাবিক লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে কি না, ভাবতে হবে। আমি মনে করি, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা ভেবে দেখবেন। মনে রাখতে হবে, জনগণের অর্থেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। তাই তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ইভিনিং কোর্স চালুর ব্যাপারে ইউজিসির কোনো অনুমোদন আছে বলে আমার জানা নেই। চ্যান্সেলর এ কোর্সের ব্যাপারে ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন। সেটার ব্যাপারে সবার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াই কাম্য। তিনি বলেন, একটা সময়ে দু-একটি বিভাগ এ কোর্স চালু করেছিল; কিন্তু এখন যথেচ্ছভাবে খোলা হচ্ছে।

অভিযোগ আছে, ইভিনিং প্রোগ্রামের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাস পরিণত হয় বাজারে। এ কোর্সে প্রাপ্ত অর্থের অপব্যবহার করে কোনো কোনো অনুষদের ডিন অনৈতিকতা চর্চা করেন বলেও অভিযোগ আছে।

নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের পক্ষ থেকেও ইভিনিং প্রোগ্রাম বাতিলের দাবি উঠেছে। প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ইভিনিং মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের সমালোচকদের একজন। তিনি সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষাকে বাঁচাতে হলে সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এভাবে চলতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামালউদ্দিন ২০১৭ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে নিজের বক্তৃতায় ইভিনিং কোর্স নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়া সান্ধ্যকালীন কোর্সে নিম্নমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাহানি ঘটছে।

সর্বশেষ গত জুনে অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশনেও সদস্যরা এই কোর্স নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু এত কিছুর পরও রহস্যজনক কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং কোর্সের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

জানা গেছে, নানা মহল থেকে সমালোচনা আর চাপ সৃষ্টির পর ইভিনিং মাস্টার্স প্রোগ্রামের সার্বিক চিত্র তুলে আনতে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে আরও চারজন ডিন সদস্য হিসেবে আছেন। যদিও কমিটির কাজ রহস্যজনক কারণে তেমন এগোচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, কমিটি গঠনের পর আমরা একটি বৈঠক করেছি। কার্যপরিধি অনুযায়ী কমিটির কাজ চলছে। এক মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে। ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে কমিটির কাজ তেমন এগোনো যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং মাস্টার্স প্রোগ্রাম শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে এ কোর্স শুরু হয়। ইভিনিং কোর্সের ক্ষেত্রে এখনও সবচেয়ে এগিয়ে এ অনুষদ। এ অনুষদে বর্তমানে ৯টি বিভাগে ১৬টি প্রোগ্রাম চলছে। প্রতিবছর মার্চ, জুলাই ও নভেম্বরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় এ অনুষদে। এর ভর্তি পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়েও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, বিজনেসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরে অন্যান্য বিভাগেও চালু করা হয়। গত জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে এক সিনেটরের প্রশ্নের জবাবে কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৬টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে এসব কোর্স চালু আছে। কিন্তু যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৪১টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ৮০টি ইভিনিং কোর্স (মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স ইত্যাদি) চালু আছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮টি পর্যন্ত কোর্স চালু আছে আইবিএতে। সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটে আছে আছে ৬টি সান্ধ্যকালীন কোর্স।

জানা গেছে, এসব কোর্সের জন্য সর্বনিম্ন ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগে এমএসসি ইন প্যাথলজি কোর্সের জন্য ১৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। আর ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীন দুটি এমবিএ প্রোগ্রামে নেয়া হয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, গঠিত কমিটিই ইভিনিং মাস্টার্সের উপযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। সেটির আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ কোর্স চালু করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মানিক রাইহান বাপ্পী জানান, ১৪টি বিভাগে ও তিনটি ইনস্টিটিউটে সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। এসব কোর্সে ভর্তিতে অস্বচ্ছতা, পরীক্ষায় ছাড়, নকলনির্ভর পরীক্ষা, উপস্থিতিতে ছাড় দেয়ার মাধ্যমে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্স। এ নিয়ে খোদ শিক্ষকদের মধ্যেই গ্রুপিং আছে। নিয়মিত কোর্সের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সান্ধ্যকোর্স ও তাদের রেজাল্টেও তফাত ঢের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর বলছে, পরীক্ষায় অনিয়ম ও বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশই সান্ধ্যকোর্সের। সান্ধ্যকোর্সে নকল ধরা নিয়ে গত বছর ২৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ আছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, সান্ধ্যকোর্সে তারাই ভর্তি হয় যারা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভালো কলেজে পড়ার সুযোগ পায় না। কিন্তু টাকার বিনিময়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সরকার মাসুম জানান, ইভিনিং কোর্স অনেকটা বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর, দেড় বছর এবং দুই বছর মেয়াদি সান্ধ্যকোর্স চালু আছে। প্রতি কোর্সে গড়ে ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা শিক্ষার্থীপ্রতি আদায় করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে ৩৩টি বিভাগের মধ্যে ১৯টিতেই এ কোর্স চালু আছে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইভিনিং কোর্স পরিচালনা নিয়ে নানা বঞ্চনা ও অনিয়মের অভিযোগ আছে। এর মধ্যে আছে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, ক্লাস না করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, দ্রুত সময়ে খাতা মূল্যায়ন করা, ভর্তিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করা। এক শ্রেণির শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা ঠিকমতো নেন না। তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য ঢাকায় অবস্থান করেন। কিন্তু ইভিনিং কোর্সে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঠিকই হাজির হন ক্যাম্পাসে।

এমন নানা অনিয়মের অভিযোগে ১১৩তম একাডেমিক কাউন্সিলে কোর্স বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন সদস্যরা। তখন ১৩০ জন শিক্ষক একাট্টা হয়ে এ কোর্স চালুর জন্য শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে ভিসির কাছে লিখিত দেন। এরপরও কর্তৃপক্ষ গত বছরের ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪২তম সিন্ডিকেট সভায় সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিল ঘোষণা করে। কিন্তু শিক্ষক সমিতি পরে চাপ সৃষ্টি করে।

চাপের মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ সান্ধ্যকালীন কোর্সের জন্য নীতিমালা তৈরি করতে বাধ্য হয়। এরপর মানোন্নয়নের ৯টি নীতিমালাসহ ১১৬তম একাডেমিক কাউন্সিলে পুনরায় কোর্সটি চালুর সুপারিশ করা হয়। পরে গত ২৯ জুন ২৪৫তম সিন্ডিকেটে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রামের নীতিমালা-২০১৯’ অনুমোদন লাভ করে।

ইভিনিং কোর্স নিয়ে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা আছে বলে জানান ইবির ভিসি অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী। তিনি সোমবার যুগান্তরকে বলেন, চিহ্নিত ত্রুটিগুলো দূর করেই শর্তসাপেক্ষে আবার এ কোর্স চালু করা হয়েছে। এখন আর যখন-তখন শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। ক্রেডিট আওয়ার বাড়ানো হয়েছে।

একদিনের পরিবর্তে দু’দিন ক্লাস নিতে হবে। শক্ত নিয়মের মধ্যে থেকে কোর্স পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আয়ের অন্যতম সোর্স এই কোর্স। বাড়তি আয়ের জন্য এ কোর্স পরিচালিত হতে পারে। তবে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা যাতে বঞ্চিত না হয় সেটি দেখা হবে।

জাবি প্রতিনিধি রাহুল এম ইউসুফ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৫টি বিভাগে চালু আছে সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম। নিয়মিত কোর্সে কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও আইবিএ বাদে অন্যসব বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্সে নামমাত্র ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। যে কারণে যারা আবেদন করেন তাদের সবাই ভর্তির সুযোগ পান।

জানা গেছে, সিএসই বিভাগে এক বছর মেয়াদি কোর্স চালু আছে। এর জন্য নেয়া হয় ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ থেকে দেড় লাখ টাকা। ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে এক বছর মেয়াদি কোর্সের জন্য নেয়া হয় ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি নেয়া হয় আইবিএতে ২ লাখ ৬ হাজার টাকা। এভাবে লোক প্রশাসন বিভাগে ১ লাখ ১০ হাজার, আইআইটিতে ২ লাখ, ইংরেজি বিভাগে ১ লাখ থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। এভাবে পরিসংখ্যান, আইআর, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অর্থ নেয়া হয়।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা এই কোর্সকে ‘বাণিজ্যিক কোর্স’ বলে মনে করেন। যে কারণে এটা বন্ধে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। এমন সংগঠনগুলোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

জোটের নেতা ও ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মাদ দিদার যুগান্তরকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সান্ধ্যকালীন কোর্স একটি সাংঘর্ষিক বিষয়। এটি মূলত বাণিজ্যিক কোর্স যার মাধ্যমে শিক্ষকরা অতিরিক্ত টাকা রোজগার করেন। এ কোর্সের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাই এ কোর্স বাতিল করা সময়ের দাবি।

১২টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের’ সভাপতি আশিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মান যাচাই না করেই টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর জোর করে সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হচ্ছে। যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মান চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করছে। এ ছাড়া সান্ধ্যকালীন কোর্সে সময় দেয়ার জন্য নিয়মিত শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চরম অবহেলা করে থাকেন। ফলে ক্রমান্বয়ে কমছে শিক্ষা ও গবেষণার মান।

চবি প্রতিনিধি আবু বকর রাহাত জানান, চট্টগ্রাম শহরে বিজিএমইএ ভবন ভাড়া করে সান্ধ্যকালীন এমবিএ প্রোগ্রাম চলছে। ওই কোর্স থেকে আয়ের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজিএমইএ ভবন কর্তৃপক্ষ ভাড়া হিসেবে পায়। বাকিটা ভাগ-বাটোয়ারা হয়।

172 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন