২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র বাস সংকট,শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে

আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২০

তরিকুল ইসলাম,ববি সংবাদদাতা:: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা পরিবহন সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অনেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে জায়গা না পেয়ে বাইরের বাসযোগে গন্তব্যে পৌঁছান। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি আবাসন ও পরিবহন সুবিধা। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসতে প্রধানত নির্ভর করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের ওপর। কিন্তু তীব্র পরিবহন সংকট এবং ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতির কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। সময় বিলম্ব হচ্ছে ক্লাস ও পরিক্ষার হলে উপস্তিত হতে। অভিযোগের শেষ নেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারন শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পরিবহন পুলে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ আছে ছয়টি ডাবল ডেকার (দোতলা) বাস, চারটি বড় বাস ও তিনটি মিনি বাস। এদের মধ্যে দুটি বড় বাস ও তিনটি মিনিবাস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব। বাকিগুলো বিআরটিসি থেকে ভাড়ায় আনা৷ কিন্তু এসব বাসের রুট ও ট্রিপের সংখ্যায় সন্তুষ্ট নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরিবহন পুলে থাকা গাড়ি গুলোর ফিটনেস নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ। এছাড়া ক্যাম্পাস থেকে স্বল্প দূরত্বে যেসব শিক্ষার্থী বসবাস করে তাদেরকে প্রধানত গণপরিবহন এবং অটোসার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারেও শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে৷

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আলীম সালেহী জানান, প্রতি সেমিস্টারে সবার কাছ থেকে যে পরিমাণ পরিবহন ফি নেওয়া হয় তা অত্যাধিক। আবার হলে এবং স্বল্প দূরত্বে যেসব শিক্ষার্থী থাকে তারা পরিবহন সুবিধা না পেলেও পরিবহন ফি দিতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের ওপরই নির্ভর করতে হয় কিন্তু সে তুলনায় গাড়ির সংখ্যা নগন্য।
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় বিশ্বাস বলেন, নতুন বাজার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রুটের পরিবহন সংকট খুব বেশি। মাঝে মাঝে বিনা নোটিশে বাস বন্ধও থাকে। ফলে আমাদের ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বিলম্ব হয়। অন্যদিকে, সয়েল এন্ড এনভায়রনমেন্ট সাইন্স বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শুভদিপ অধিকারী জানান, নগরীর নথুল্লাবাথ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যে বাসগুলো দেওয়া হয় সেগুলোর বেশিরভাগই ফিটনেস বিহীন। এমনকি শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় বেশিরভাগেরই ঝুলে ঝুলে ক্যাম্পাসে যেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি রূপাতলী থেকে কোনো শিক্ষার্থীই আর গাড়ীতে উঠতে পারে না অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব অভিযোগের ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত নয়। পরিবহন পুলের সভাপতি মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মেহেদী হাসান। তাঁর মতে, শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যা দূরীকরণে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। আমি দায়িত্ব নেবার পর থেকে শিক্ষার্থী পরিবহনে রুট ও গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভাড়ায় যে গাড়িগুলো চলে সেগুলোর ফিটনেস নিয়ে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ আছে। সে ব্যাপারে বিআরটিসির কাছে বারবার চিঠি দিয়ে ভালো মানের গাড়ি সরবরাহের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষে পরিবহন পুলে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে নতুন গাড়ি সংযোজনের জন্য ইউজিসির বরাদ্দ দরকার হয়। নতুন বছরে এ খাতের কোনো বরাদ্দ এখনো আসে নি। তবে ইউজিসিতে আমাদের চাহিদা পত্র পাঠানো হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন দ্রুত পরিবহন সংকট সমাধানের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, আমি যোগদানের পর নভেম্বর মাসে নতুন একটি ডাবল ডেকার(দোতলা) বাস পরিবহন পুলে যুক্ত করেছি।সামনে সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে ইউজিসিতে নতুন বাসের জন্য আবেদন করা হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে উর্ধতন কর্তৃপক্ষেরও সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

113 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন