১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

সেদিন হুমায়ূন স্যার এক ঘণ্টা শুয়ে থেকে বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন

আপডেট: জুলাই ১৮, ২০১৯

১৯ জুলাই নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী। নানা আয়োজনে দিনটি উদযাপন করবেন হুমায়ূনভক্তরা।

বৃষ্টি বিলাসী এই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের বৃষ্টি বিলাসের ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন যুগান্তরের সঙ্গে।

আজ থেকে ১৩ বছর আগে এই বর্ষাকালেরই ঘটনা। ৭টি এক খণ্ডের নাটক নির্মাণের জন্য হুমায়ূন স্যার নেত্রকোনায় তার গ্রামের বাড়ি কুতুবপুর যাবেন। অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমার সঙ্গে সালেহ আহমেদ, মাহফুজ আহমেদ, মিতানূর, ডা. এজাজসহ আরও অনেকেই ছিলেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা থেকে ভাড়া করা বাসে আমাদের যাত্রা শুরু হয়।

হুমায়ূন স্যার বাসের ভেতর খুব মজা করছিলেন। আমরা প্রায় এক সপ্তাহের জন্য যাচ্ছিলাম। গন্তব্যের ৫ কিলোমিটার আগে গিয়ে বাসটি থেমে যায়। কারণ এরপর বাস যাওয়ার আর সুযোগ নেই। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই আমরা রাত ৮টার দিকে পৌঁছলাম।

ওই এলাকার ইসলাম উদ্দিন পালাকার আমাদের গানে গানে বরণ করলেন। বৃষ্টির মধ্যেই সেদিন রাতেই শুটিং করার পরিকল্পনা নিলেন স্যার। আমরা পৌঁছার অল্প সময়ের মধ্যেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যেই তার সহকারীকে বাড়ির উঠানে একটা চৌকি বসাতে বলেন। এর সঙ্গে তোষক এবং বালিশও দেয়ার নির্দেশ দেন। বৃষ্টির মধ্যেই সেই চৌকিতে গিয়ে শুয়ে পড়েন তিনি। আমরা সবাই বাংলা ঘরে ছিলাম।

এ কর্মকাণ্ড দেখে আমি ভাবলাম, সারা দিন বৃষ্টিতে ভিজে আসার পর আবার কেন এই মানুষটা বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেন! ভাবলাম, তার কি কোনো ক্লান্তি নেই? এভাবেই প্রায় এক ঘণ্টা শুয়ে থেকে বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন হুমায়ূন স্যার। কখনও হাত দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে ও মুখে মাখতে থাকেন। বৃষ্টি কমলে ঘরের মধ্যে এসে আবার ইসলাম উদ্দিন পালাকারের গান শুনতে থাকলেন। এভাবেই রাত গভীর হয়ে যায়। সবাই সেদিনের মতো ঘুমাতে চলে যাই।

সেদিনই আমি দেখেছিলাম স্যার বৃষ্টিকে কতটা ভালোবাসতেন! পরের দিনও যথারীতি বৃষ্টি চলছে। শুটিং কীভাবে হবে এটা নিয়ে চিন্তিত সবাই। তাও আবার আউটডোরের শুটিং। সারা দিন বসে থাকার পরও বৃষ্টি না কমায় একটি বড় শামিয়ানা টানানোর নির্দেশ দেন স্যার। এরপর এই প্যান্ডেলের নিচেই শুটিং চলল রাত ২টা পর্যন্ত। হুমায়ূন স্যার বৃষ্টির মধ্যে বসে থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এই বৃষ্টিপ্রেমী হওয়ার কারণে নুহাশ পল্লীতে ‘বৃষ্টি বিলাস’ নামে একটি বাড়িও তৈরি করেন স্যার। তিনি যে আসলেই প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন, জোছনাকে ভালোবাসতেন, বৃষ্টিকে ভালোবাসতেন- এর অনেক প্রমাণ আমি পেয়েছি।

স্যারের নাটক বা সিনেমায় নুহাশ পল্লীতে শুটিংয়ের সময় সাধারণত আমি বৃষ্টি বিলাসে ঘুমাতাম। বৃষ্টির ভেতরে একদিন ভোরে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর দেখলাম, একজন লোক ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে শালবনের ভেতর চলে গেলেন।

পরে আবিষ্কার করি, ওই লোকটি ছিলেন হুমায়ূন স্যার। আমি তো দেখেছি একদিন। হয়তো তিনি প্রতিদিনই যেতেন! তাই তাকে আমি সাধারণের সঙ্গে কোনো দিনই তুলনা করিনি। তিনি আসলেই অসাধারণ ছিলেন।

108 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন