আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২০
বিজয় নিউজ:: গত কয়েক বছর দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো। সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবে সুফল মেলেনি।
এ অবস্থায় নতুন বছরেও দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ থাকছে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো। যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।
তাদের মতে, বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়নে আগামী বছর কয়েকটি বিষয়ে জোর দিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা, রফতানি ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং সর্বোপরি বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা। এছাড়াও টাকা পাচার বন্ধে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হল বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। এক কথায় বললে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়নি।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ না হওয়ার মূল কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সুশাসনের অভাব। আর এ দুই সমস্যার কোনো উন্নয়ন হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশের নিয়মিত সমস্যা হল অবকাঠামোগত দুর্বলতা। বিশেষ করে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ। আর গ্যাস না হলে বিনিয়োগ করা যায় না। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না।
তার মতে, রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচক নেতিবাচক। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, শেয়ারবাজার এবং ঋণের প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত নেতিবাচক। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, কর আদায় পরিস্থিতি। প্রত্যাশা ছিল, নতুন কর আদায় বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে তা কমছে। ফলে অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক নেতিবাচক। এ নেতিবাচক অবস্থা নিয়ে শুরু করেছে নতুন বছর। ফলে বলা যাচ্ছে অর্থনীতি ভিত্তিটি শক্তিশালী নয়। এ দুর্বল ভিত্তির ওপরই নতুন বছরে ভিত রচিত হবে। এক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আগামীতেও বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো। তিনি বলেন, মূলধন সংগ্রহের দুটি খাতই দুর্বল। এ খাতগুলোকে শক্তিশালী করে ব্যবসায়ীদের সহজে পুঁজির জোগান দিতে হবে। না হলে বিনিয়োগ বাড়বে না। সামগ্রিকভাবে যা কর্মসংস্থান এবং পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
একটি দেশে বিনিয়োগ বাড়লে তিনটি নির্দেশক দিয়ে বোঝা যায়। প্রথমত, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়বে। একই ভাবে বাড়বে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি। এক্ষেত্রে চলতি মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ।
কিন্তু গত বছরের আগস্টে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বর আরও কমে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, অক্টোবরে ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং সর্বশেষ নভেম্বরে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে নেমে এসেছে।