২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

 বিমান বাংলাদেশের কালো দিন: ৪৯ জন মৃত্যুর ৩৫ বছর

আপডেট: আগস্ট ৫, ২০১৯

আজ ৫ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কালো দিন। ৩৫ বছর আগে এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে আকাশ পথে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে। কালের বিবর্তনে সে খবর এখন অনেকেরই অজানা। ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণ করার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফকার এফ২৭-৬০০ জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) কাছাকাছি একটি জলাভূমির মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পূর্বনির্ধারিত ঘরোয়া যাত্রী ফ্লাইট পরিচালনা করছিল। সে ঘটনায় মোট ৪৯ জন মারা যান। এই দুর্ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের মাটিতে ঘটা প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা এবং এয়ারলাইন্সের সবচেয়ে খারাপ দুর্ঘটনার একটি।

উড়োজাহাজ

এস২-এবিজে হিসাবে নিবন্ধিত ফকার এফ২৭-৬০০ নামের উড়োজাহাজটি ১৯৭১ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এটি প্রথমে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য চালনা করা হয় কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর ভারত সরকার থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া সহযোগিতার একটি অংশ হিসাবে এটি ১৯৭২ সালে বিমানকে দেয়া হয়। দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত উড়োজাহাজটি মোট ২৪,০৮৫ চক্র এবং মোট ১৫,৫৯৫ এয়ারফ্রেম ঘণ্টা উড়েছিল।

ফকার এফ২৭ ফ্রেন্ডশিপ

ফকার এফ ২৭ ফ্রেন্ডশিপ হল ডাচ কোম্পানি ফকারের তৈরি দুইটি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনবিশিষ্ট স্বল্প পাল্লার ছোট আকারের বিমান। এই বিমানটি সাধারণত ৪৮ থেকে ৫৬ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম। ১৯৫৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এই বিমানটি বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ফকার কোম্পানি প্রায় ৫৮৬ টি এফ ২৭ তৈরি করার পর ১৯৮৭ সালে এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এই বিমানটি পঞ্চাশের দশকের ব্যবসা সফল বিমান ম্যাকডোনাল ডগলাস ডিসি-৩ কে প্রতিস্থাপন এবং একই প্রকারের অন্যান্য কিছু বিমানের সাথে প্রতিযোগিতার জন্য নকশা করা হয়েছিল। প্রথমদিকে বিমানটি রোলস রয়েস ইঞ্জিন দিয়ে ২৮ জন যাত্রী জন্য নকশা করা হয়েছিলো কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে নকশায় পরিবর্তন করে এর ধারণক্ষমতা ক্ষেত্র বিশেষে ৫৬ পর্যন্ত উন্নীত করা হয়।

দেশের প্রথম নারী পাইলটও নিহত হন

সেই ফ্লাইটে পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন কানিজ ফাতেমা রোকসানা, যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট হিসাবে পরিচিত। সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা বাংলাদেশের সরকারি বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর প্রথম নারী বৈমানিক। তিনি ক্যাপ্টেন পদাধিকারী ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বাণিজ্যিক বিমান পরিচালনার সনদ লাভ করেন। ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট তিনি বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ফকার এফ-২৭ বিমানে করে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৃষ্টি বিঘ্নিত আবহাওয়ার দরুন বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত হন। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আগত অভ্যন্তরীণ এই ফ্লাইটটি অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে দুইবার অবতরণের চেষ্টা করেও রানওয়ে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। তৃতীয়বার অবতরণের চেষ্টার সময় বিমানটি রানওয়ে থেকে ৫০০ মিটার আগেই এক জলাভূমিতে পতিত হয়ে বিধ্বস্ত হয়।

যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটে

দুর্ঘটনার দিন ঢাকার আবহাওয়া খুব খারাপ ছিল, উদ্দাম ও ভারী বৃষ্টিপাত কারণে দৃষ্টিসীমানা সীমিত ছিল। এই অবস্থার মধ্যে বিমানটি বেতার যোগাযোগের মাধ্যমে অবতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাইলট প্রথমে ৩২ নং রানওয়েতে অবতরণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রানওয়ে দেখা না যাওয়ায় এবং শেষ মুহূর্তে পাইলট বুঝতে পারেন যে তিনি ভুল দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, তখন পাইলট অবতরণ না করে আবার উড়ে যান। দ্বিতীয় দফায় আইএলএস ব্যবহার করে অবতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার থেকে রানওয়ে ১৪ তে অবতরণ করার নির্দেশনা নেয়া হয়। ভারী বর্ষণের মধ্যে প্রবল ঝোড়ো বাতাসে আবার অবতরণের চেষ্টা চালালে পার্শ্বমুখি বাতাসের ঝাপটার কারণে অবতরণ করা আবার ব্যর্থ হয়। তৃতীয়বার অবতরণ করার সময় (রানওয়ে ১৪ তে দ্বিতীয়বার) বিমানটি রানওয়ে থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটা ডোবায় অবতরণ করে এবং বিধ্বস্ত হয়।[২] বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানটি ছিল উত্তরা জসিমউদ্দিন সড়কের কাছে।

যারা মারা গেছেন এতে ৪ জন ক্রু ও ৪৫ জন যাত্রীসহ সবাই নিহত হয়। যাত্রীদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ, একজন জাপানি ও বাকিরা বাংলাদেশী ছিল। যাত্রীদের বেশীরভাগ (৩৩ জন) মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার জন্য একটি সংযোগ ফ্লাইট ধরতে ঢাকা ভ্রমণ করছিল।

90 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন