২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

৫০ বছর পর ‘প্রথম ভালোবাসা’ খুঁজে পেলেন ৮২ বছরের বৃদ্ধ!

আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ভালোবাসা কোনও বাধা মানে না- এটি শুধু রোমান্টিক উপন্যাসের লাইন নয়, তা বাস্তব জীবনেও সমান সত্য। এ কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে রাজস্থানের এক বৃদ্ধের ঘটনা শুনুন। আশি বয়োসোর্ধ্ব এ ব্যক্তি প্রমাণ করে দিয়েছেন, সত্যিকারে ভালোবাসা বয়স বা দূরত্বের ধার ধারে না।

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়সালমিরের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের নাম কুলধারা। সেখানে দারোয়ানের কাজ করেন ৮২ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ। সম্প্রতি ‘হিউম্যানস অব বোম্বে’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তার তরুণ বয়সের প্রথম প্রেম এবং অর্ধশতাব্দী পরে সেই প্রেমিকাকে খুঁজে পাওয়ার এক অবিশ্বাস্য ঘটনা!

পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বৃদ্ধ বলেন, ‘এটি সেই সময়ের কথা, যখন প্রথম দেখাতেই প্রেম হয়ে যেত!’

বয়স যখন তিরিশের ঘরে, তখন জীবনে প্রথমবারের মতো প্রেমে পড়েন কুলধারার এ বাসিন্দা। তা-ও আবার স্থানীয় কোনও মেয়েকে নয়, তিনি ভালোবেসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এক নারীকে। সত্তরের দশকে ম্যারিনা নামে ওই নারী পাঁচদিনের সফরে জয়সালমির গিয়েছিলেন, সেখানেই দেখা হয় দুজনের। আর প্রথম দর্শনেই প্রেমের জোয়ারে হাবুডুবু খেতে শুরু করেন এ যুগল।

বৃদ্ধ বলেন, ‘আমাদের দুজনের জন্যই এটি ছিল প্রথম দেখায় প্রেম। পুরো সফরে আমরা একে অপরের থেকে চোখ সরাতে পারিনি।’

Love-3.jpg

শুধু চোখাচোখি নয়, অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে ম্যারিনা তার মনের কথা প্রকাশও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

এ কথা শুনে লজ্জায় যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলেন তার ভারতীয় প্রেমিক। বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলাম। জবাবে একটি কথাও বলতে পারিনি। ওই কথাগুলো আমাকে আগে কেউ কখনো বলেনি।’

ম্যারিনা অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার পরেও যোগাযোগ ছিল তাদের। দীর্ঘদিন একে অপরের কাছে চিঠি লিখেছেন তারা। এর মধ্যে ৩০ হাজার রুপি ধার করে একবার অস্ট্রেলিয়াতে চলে যায় প্রেমিক ছেলেটি। সেখানে প্রায় তিন মাস ছিলেন তিনি।

স্মৃতিকাতর বৃদ্ধের ভাষায়, ‘এই তিন মাস ছিল যাদুকরী। সে আমাকে ইংরেজি শিখিয়েছিল, আমি তাকে শিখিয়েছিলাম কীভাবে ঘুমার (ঐতিহ্যবাহী নৃত্য) নাচতে হয়।’

তবে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। একসময় জটিল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ম্যারিনা তাকে বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় পাকাপোক্তভাবে থেকে যাওয়ার প্রস্তাব দেন তার বিদেশি প্রেমিককে। কিন্তু মাতৃভূমি ছাড়তে রাজি ছিলেন না কুলধারার যুবক, ম্যারিনাও ভারতে স্থায়ী আবাস গড়তে রাজি নন। ফলাফল- বিচ্ছেদ! সিদ্ধান্তটি অবশ্য কঠিন ছিল দুজনের কাছেই।

বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি চলে আসার দিন সে কেঁদেছিল। কিন্তু তাকে তো ছাড়তেই হতো!’

এরপর সময় গড়াতে থাকে। একদিন পরিবারের চাপে বিয়ে করেন ভারতীয় যুবক, জীবিকার প্রয়োজনে চাকরি নেন দারোয়ান হিসেবে। কিন্তু প্রথম প্রেমের কথা কি আর ভোলা যায়!

Love-3.jpg

বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি প্রায়ই ম্যারিনার কথা ভাবতাম। সে কি বিয়ে করেছে? আমি কি তাকে আর কখনো দেখতে পাব? কিন্তু তার কাছে চিঠি লেখার সাহস আর হয়নি।’

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে স্মৃতিগুলো আবছা হয়ে আসে। বৃদ্ধের ছেলেরা বড় হয়ে দূরে চলে যায়, বছর দুয়েক আগে তার স্ত্রীও মারা গেছেন। শুধু তিনিই ৮২ বছর বয়সে ভারতের প্রত্যন্ত এক গ্রামে বসে এখনো দারোয়ানের কাজ আর পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে সময় পার করছেন।

বৃদ্ধ বলেন, ‘‘যখন ভাবছিলাম, জীবন আর কখনোই আমাকে অবাক করতে পারবে না, তখনই সেটি ঘটল। একমাস আগে ম্যারিনা আমার কাছে চিঠি দিল। সে জিজ্ঞেস করেছে, ‘কেমন আছো, বন্ধু?’ ৫০ বছর পর সে আমাকে খুঁজে নিয়েছে। সেই থেকে প্রতিদিন সে আমাকে কল দেয়। আমাদের অনেক কিছু করা বাকি!’’

বৃদ্ধ জানান, তিনি চলে আসার পর ম্যারিনা আর বিয়ে করেননি এবং তিনি শিগগিরই ভারতে আসতে চাচ্ছেন।

দুজনের বয়স বাড়লেও মন থেকে ভালোবাসা কমেনি। প্রেমিক বৃদ্ধ বলেন, ‘রামজির কসম, মনে হচ্ছে আমি আবারও ২১ বছরের হয়ে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘জানি না ভবিষ্যতে কী আছে, তবে এটি জানি, প্রথম ভালোবাসা আমার জীবনে ফিরে এসেছে এবং রোজ কথা বলছে। এই অনুভূতিটা যে কী, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না।’

গত বৃহস্পতিবার হিউম্যানস অব বোম্বে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে এই ঘটনা শেয়ার করার পরপরই তা ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। অনেকেই ম্যারিনার ছবি দেখতে এবং তাদের পুনর্মিলনের ঘটনা প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছেন। সবাই আশা করছেন, শেষ বয়সে হলেও এই প্রেমিক যুগলের প্রথম ভালোবাসা যেন সত্যিই মধুর সমাপ্তি পায়।

106 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন