২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মেশিনম্যান সালামের হাতে প্রশ্নফাঁস, জড়িত কয়েকজন চিকিৎসকও

আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২০

বিজয় নিউজ:; স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরাের মেশিনম্যান আব্দুস সালাম প্রেস থেকে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বের করতেন। এরপর তারই খালাতো ভাই অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন মুন্নুকে তা সরবরাহ করা হতো। জসিম তার বিভিন্ন সহযোগীর কাছে ফাঁস করা প্রশ্ন সরবরাহ করতেন।

জসিমকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান আব্দুস সালাম প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা। মূলত তার হাত ধরেই প্রশ্নফাঁসের প্রক্রিয়ার শুরু। আর প্রশ্নফাঁসের এই প্রক্রিয়ায় জড়িত পাঁচ-ছয়জন অসাধু চিকিৎসক এবং তিন-চারটি কোচিং সেন্টারও।

সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের এই মূলহোতাকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাকে ধরতে সর্বশেষ চার-পাঁচদিন নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি ও অভিযানের পর গতরাতে সফল হয় সাইবার পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাতে ছদ্মবেশ ধরে রাজধানীর বনশ্রীর জি-ব্লকের একটি বাসা থেকে আব্দুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সন্ধান পায় সাইবার পুলিশ। ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এস এম সানােয়ার হােসেনকে গ্রেফতারের পর সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, সানােয়ারের তথ্যের সূত্র ধরে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভূঁইয়াসহ জাকির হােসেন দিপু এবং পারভেজ খানকে। জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়।

সিআইডি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে কী পরিমাণ সম্পদ তারা গড়েছেন সেগুলো আমরা তদন্ত করছি। মানি লন্ডারিং মামলার প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে তদন্ত করছি। আসামিদের নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য পেয়েছি। শুধু একজনের কথা যদি বলি, জসিমের মোট ৩৮টা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পেয়েছি। এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ ২১ কোটি ২৭ লাখ। তার স্ত্রী শারমিন আরা জেসমিন ওরফে শিল্পীর ১৪টি অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ তিন কোটি ৭৮ লাখ। আমার লক্ষ করেছি, যখন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হয়, সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বরে এই অ্যাকাউন্টগুলোতে ক্রেডিট বেশি হয়েছে।

আশরাফুল আলম বলেন, গত ২০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে সিআইডির সাইবার পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সঙ্গে জড়িত আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে সাইবার পুলিশ। গ্রেফতাকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে মাস্টারমাইন্ড আব্দুস সালামের নাম।

তিনি বলেন, অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ হলে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। প্রশ্নফাঁসের এই প্রক্রিয়ায় পাঁচ-ছয়জন অসাধু চিকিৎসক এবং তিন-চারটি কোচিং সেন্টারের জড়িত থাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এ বিষয় বিশদ তদন্ত চলছে।

গ্রেফতার সালামের সম্পদ সম্পর্কে জানতে চাইলেন আশরাফুল আলম বলেন, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা নেই বললেই চলে তবে তারা নেশা হলো জমি কেনা। তিনি কী পরিমাণ জমিজমার মালিক তা জানার জন্য চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, মেডিকেল প্রশ্নফাঁসে ভর্তি অনেকেই এখন চিকিৎসক। মামলার তদন্ত শেষে পরবর্তীতে জালিয়াতি করে ভর্তি ও পাস করা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে। আব্দুস সালামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। এই চক্রে আর কারা কারা জড়িত তার জন্য চেষ্টা করা হবে।

139 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন