২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ডোনাল্ড ট্রাম্প-ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের ফাঁস হওয়া গোপন বার্তায় কী আছে?

আপডেট: জুলাই ৯, ২০১৯

বিজয় নিউজ রিপোট।। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত। ফাইল ছবি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারখের বেশ কিছু স্পর্শকাতর ইমেইল ফাঁস হয়েছে। এসব বার্তা ব্রিটিশ মেইল অন সানডে পত্রিকায় ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রদূতের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। খবর বিবিসি বাংলা। ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় দুই বছর সময়কালের এসব ইমেইলে স্যার কিম খোলাখুলিভাবে ইরান, রাশিয়া ও চীন সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছেন, রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারখ ‘যুক্তরাজ্যকে ভালোভাবে সেবা দিতে পারেননি’। এ নিয়ে ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, আমরা আর তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখব না। এসব ইমেইলে হোয়াইট হাউসকে ‘অদক্ষ’ এবং ‘ব্যতিক্রমী অকার্যকর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি তেরেসা মেকে আক্রমণ করেও একটি টুইটার বার্তায় বলেছেন, ‘এটা ভালো খবর যে যুক্তরাজ্য নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী পেতে চলেছে। এদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, কীভাবে এসব ইমেইল ফাঁস হলো, সেটি তারা তদন্ত করে দেখতে শুরু করেছে। ইরান সম্পর্কে যা রয়েছে মেইল পত্রিকায় ছাপা হওয়া তথ্যানুযায়ী, ২২ জুনের একটি মেমোতে রাষ্ট্রদূত লিখেছেন যে, ইরান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে ‘অসংলগ্ন, বিশৃঙ্খল।’ তিনি লিখেছেন, ‘ইরান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি খুব তাড়াতাড়ি আরও সুসংলগ্ন হবে বলে মনে হয় না। এটি একটি বিভক্ত প্রশাসন।’ ফাঁস হওয়া তথ্যে ট্রাম্প দাবি করেছেন, সম্প্রতি তিনি ইরানের ওপর একটি মিসাইল হামলার পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এসেছেন। কারণ হরমুজ প্রণালি ঘিরে উত্তেজনা ততটা জোরালো নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে স্যার কিম লিখেছেন- ‘‌সম্ভবত তিনি কখনই পুরোপুরিভাবে দায়িত্ব নিতে চাননি এবং তিনি বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর যেসব পরিবর্তন তিনি করেছেন, সেটি কীভাবে ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে’। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রদূত সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা এখনও আছে। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘আরও বেশি কঠোর উপদেষ্টাদের একটি দলের ভেতরে রয়েছেন’। রাশিয়া সম্পর্কে যা রয়েছে মেইল পত্রিকায় ছাপা হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই বছর আগের একটি বিস্তারিত বিবরণীতে ট্রাম্প প্রচারণা ও রাশিয়ার গোপন আঁতাতের অভিযোগের বিষয়ে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লিখেছেন। যদিও এসব অভিযোগের ব্যাপারে খুব একটা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেই সময় স্যার কিম আশঙ্কা করেছিলেন যে, এগুলো সত্যি হতে পারে। ‘সবচেয়ে খারাপের দিকটাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না’। প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া তথ্যে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের ভেতরের অভ্যন্তরীণ লড়াই এবং বিশৃঙ্খলতার ভেতরে পড়েছে এবং কোনো না কোনোভাবে রাশিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে কেলেঙ্কারির মধ্যে পড়েছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ‘আগের কয়েক দশকে যখন ট্রাম্প ও কুশনারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিতে পড়েছিল, তখন কৌশলী রাশিয়ান অর্থায়নকারীরা তাদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন।’ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লন্ডনে পাঠানো একটি বার্তায় ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লিখেছেন- ‘এই আমেরিকা প্রথম নীতির প্রশাসন বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় গভীর ক্ষতি করে ফেলতে পারে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর কর বসিয়েছেন। স্যার কিম লিখেছেন- ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপগুলোকে অবহেলা করতে পারেন, এমনকি জাতিসংঘে অনুদানেও কাটছাঁট করতে পারেন’। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চীন সম্পর্কে যা আছে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লন্ডনকে জানিয়েছেন যে, মি. ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বৈদেশিক নীতি ইউরোপীয় ইউনিয়নে এমনকি পুরনো মিত্রদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। স্যার কিমের বর্ণনা অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে নিজেদের দূরত্বে সরিয়ে রেখেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের উচিত তাদের পথ অনুসরণ করা’। ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে স্যার কিম বিশ্বাস করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাজ্যকে চাপ দিয়ে যাবেন, যাতে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র অথবা চীন, কারও একজনকে বেছে নেয়।

66 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন