২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বিচার বিভাগ এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে: মির্জা ফখরুল

আপডেট: জুলাই ৯, ২০১৯

বিজয় নিউজ রিপোট।। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে সরকারে আসার পর থেকেই ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করছে সুচতুরভাবে। আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। এখন বিভাগটি সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। জনগণের আশ্রয়ের শেষস্থল বিচার বিভাগকে দলীয়করণের মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী কায়েম করে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তারা। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলা সংক্রান্ত মামলায় নিু আদালতের দেয়া রায়ে বিচার ব্যবস্থায় এ চিত্র উঠে এসেছে। ওই মামলার রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের শাস্তির আদেশ পুরো জাতিকে বিস্মিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা যে কোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, আমরা সবসময়ই সন্ত্রাসের ঘটনায় নিন্দা করেছি, প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। একটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সব কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করে তিন বছর পর অভিযোগপত্র এবং ২৫ বছর পর আদেশ দেয়া প্রমাণ করে- এই আদেশ ন্যায়বিচার-পরিপন্থী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় এক নম্বর আসামি ছিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আমিনুল ইসলাম। তাকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি ৯ জনকে দেয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। বর্তমান পার্লামেন্ট জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফল জবরদস্তি করে নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। সেই কারণে জনগণের কাছে কোনো প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতার সুযোগ নেই, রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। বিচার বিভাগও এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, প্রতিরক্ষা, এমনকি বিচার ব্যবস্থাকে আজ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। ফলে জনগণের যে ন্যূনতম আস্থা সেই বিচার বিভাগের কাছে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত রায়ে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের শিকার হয়েছে এবং জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিু আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করা হয়েছে, ন্যায়বিচার তিরোহিত হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হচ্ছে। উচ্চ আদালতেও এর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। বিচারপতি সিনহাকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ-দেশত্যাগে বাধ্য করার ফলে ভীতি সর্বগ্রাসী হয়েছে এবং দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগের কারণে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। দেশনেত্রীর মামলায় বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, একটি ফ্যাসিবাদী স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের এই ভয়াবহ প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খুব সিম্পল কথা- পাবনার ওই ঘটনায় কারোই মৃত্যু হয়নি, তারপরও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। তা-ও একজন নয়, ৯ জন। এই ধরনের রায় এবং বিচার অন্তত আমরা যারা আইনজীবী, তাদের কারও জীবনে শুনিও নাই, জানিও না। এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

93 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন