২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

এক বছর ধরে সাবেক চেয়ারম্যান ঘুরছেন বয়স্ক ভাতার জন্য

আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০১৯

জনসেবার নেশায় সরকারি চাকরি পেয়েও করেননি। দুই মেয়াদে ৯ বছর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন দাপটের সঙ্গে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করেছেন। যেখানেই মানুষের সমস্যার কথা শুনতেন, ছুটে যেতেন তাদের কাছে। চোর ও দুস্কৃতকারীদের কাছে তিনি ছিলেন আতঙ্ক। গরিব-দুঃখী-বয়স্ক-বিধবা নানা সাহায্য বা ভাতার জন্য প্রতিনিয়ত তার কাছে ধরনা দিতেন। সাধ্য আনুযায়ী এসবের সমাধান করতেন। আজ তিনিই নিজের বয়স্ক ভাতার জন্য ধরনা দিচ্ছেন। তিনি হলেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ।

দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বাইগুনি ভুলিগাড়ী গ্রামের আব্দুল হামিদ গাইবান্ধা কৃষি কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে কৃষি ডিপ্লোমা করেন। এরপর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকারি চাকরি হলেও জনসেবার নেশায় পড়ে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৮ সালে প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সে সময় চার বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০০ সালের প্রথমদিকে আব্দুল হামিদসহ ওই উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১১ জন চেয়ারম্যান একত্রিত হয়ে এলাকার সমস্যা ও উন্নয়নে সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় যান। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ওই ১১ জন চেয়ারম্যান বিএনপির স্থানীয় নেতাদের রোষানলে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়। আব্দুল হামিদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ৩৯টি মিথ্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে নারী নির্যাতন মামলাও ছিল। মামলার বেড়াজালে পড়ে তিনি আর্থিক ও সামাজিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। একাধিকবার জেলও খেটেছেন। সর্বশেষ গত বছরের ১০ আগস্ট একটি মামলার পরোয়ানা মূলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ৯ মাস কারাভোগ শেষে গত জুনে মুক্তি পান। জেল থেকে বের হয়ে এসে তিনি স্ট্রোক করেন।

স্ট্রোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই ইউনিয়নের ভুলিগাড়ী গ্রামের নিজবাড়িতে বর্তমানে শয্যাশায়ী আব্দুল হামিদ। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে। নিজের টগবগে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে বর্তমান দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে একাধিকবার কেঁদে ফেলেন। গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদেও বহাল রয়েছেন তিনি। কিন্তু দলের কেউ তার কোনো খোঁজ-খবর নেন না বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। রোগ-শোকে বিছানায় পড়ে আছি। কেউ আমার খোঁজ নিতে আসেননি।

তার স্ত্রী কোহিনুর বেগম জানান, তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। ১২ বিঘা জমি ছিল। মামলা ও চিকৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে ১১ বিঘা জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এখনও জমি বিক্রির টাকায় কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চলছে। এখন এতটাই অভাব দেখা দিয়েছে যে, চিকিৎসা ও অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি স্বামীর নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে এক বছর ধরে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এখনও তা করা হয়নি। পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা আব্দুল হামিদের এখন একটাই আশা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াবেন।

যোগাযোগ করা হলে দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু বলেন, বয়স্ক ভাতার জন্য আব্দুল হামিদ ৭-৮ মাস আগে আবেদন করেছেন। আমি তাকে দ্রুত বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার পাশপাশি কিছু আর্থিক সহায়তাও করব।

110 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন