২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালে অরক্ষিত নদ-নদী-প্রশসন দেখছেন !

আপডেট: ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯

এভাবেই অবৈধ কারেন্ট জাল পরে আছে হিজলা নৌ পুলিশ ফাড়ির সামনে। অফিসের ছাদে চরগড়া, বেন্দি এবং বাধাজাল।
হিজলা প্রতিনিধি ::  বরিশালে জাটকা মৌসুম, দেদারছে চলছে জাটকা আহরণ। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে কারেন্টজাল বেন্দি জাল বাওয়ার হিড়িক। দাপ্তরিক কাজ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও নদীতে প্রভাব পরছে না প্রশাসনের।

জানা গেছে অবৈধ জাল এবং জেলেদের নিয়ন্ত্রনের জন্য মৎস্য দপ্তর, নৌ পুলিশ, কোষ্টগার্ড, জাতীয় ক্ষূদ্র মৎস্যজীবী জেলেসমিতি, জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি থাকলেও তাদের পদচারনা নেই নদীতে বা জেলেদের পাশে। মাঝে মাঝে জাল ধরার নামে আটক-নৌক্যাম্পে এনে নাটক। অনৈক অর্থের বিনিময়ে তা আবার জেলেদের হাতে।

হিজলা উপজেলা একটি বিছিন্ন জনপদ। যেদিকে তাকাই শুধু নদী আর চর। এ যেন এক ভিন্ন জগত। উপজেলার আয়তনের ১২ আনা নদী এবং চর। এই নদী এবং নদীর পারে রাশি রাশি বেড় জাল। ভাষানচর থেকে গজারিয়া চ্যানেল হয়ে বাউশিয়া পাড়ি দিয়ে মুল মেঘনার মুখ পর্যন্ত কয়েক শত মাইল শুধু বেড়জাল আর বেড় জাল। যার অপর নাম বেন্দি বা চরগড়া। একটু সামনে আগালে ধুলখোলার মুখ।

ডানে-বামে তাকালেই শুধু চর আর চর। এ চরে বাসা বাধছে কারেন্টজাল, বেন্দিজাল, আর চরগড়া,বাধা জালসহ নানা ধরনের জাল। সামনে তাকাই চর মেঘা-কানিবগা- সাওড়াসৈয়দখালী হয়ে হাইমচর পর্যন্ত সম্পুর্ন চর আর চর। সেখানেও চরের একই দশা। একটু পেছনে তাকাই-পুরাতন হিজলা লঞ্চঘাট থেকে হরিনাথপুর-মেমানিয়ার চরদুর্গাপুর সর্বশেষ হরিনাথপুর বন্দর হয়ে চরমাইঝারী, চরজানপুর সবখানে শুধুই জাল আর জাল।

এ যেন জেলেদের নিত্যদিনের খেলা। নৌ পুলিশ, কোষ্টগার্ড মাঝে মাঝে এদের হানা দিলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে বলে মনে হয় না। জেলেদের দাবি একবার জাল আটক করলেও তা আবার তাদের হাতে পৌছে দেয় প্রশাসন। কখনও নৌ পুলিশ, কখনও মৎস্য মৎস্য দপ্তর, কখনওবা কোষ্টগার্ড-জাল আটক করে পরবর্তীতে তা জেলেদের মাঝে অর্থের বিনিময় পৌছে দেয়।

মাঝখানে অনৈতিক অর্থের বিনিময়। সম্প্রতি হিজলা উপজেলায় বেশ ক’টি নৌকা, ট্রলার অবৈধজাল সহ আটক হলেও প্রশাসন- হিজলা নৌ পুলিশ ফড়ি এবং কোষ্টগার্ড উপজেলা পর্যন্ত আনলেও তা আর পোড়ানো হচ্ছে না। তা আবার রাতের আধারে চলে হচ্ছে জেলেদের হাতে। কখনওবা নৌকা বা ট্রলার কয়েক দিন নৌ পুলিশ ফাড়ির সামনে থাকলেও অদৃশ্য কারণে চলে হচ্ছে সেই মালিকের হাতে।

দায় শুধু জেলেদের-অর্থের মালিক প্রশাসন: নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন জেলে জানান, ইতোমধ্যে হিজলা নৌ পুলিশ ফাড়ি, মৎস্য দপ্তর, কোষ্টগার্ড বেশ ক’টি নৌকা এবং জাল আটক করেছে। তা পর্যালোচনা করেন- দেখেন অভিযান শেষে ক’টি জাল আটক করে পোড়ানো হচ্ছে বা নৌকা আটক করে টেন্ডার আহব্বান করছে এবং আটকের ক’দিন পর জাল পোড়ানো হচ্ছে। পুলিশ ফাড়ির ছাদে জাল উঠানোর প্রয়োজন ই বা কি ? রাতের আধারে কি ভাবে জাল ছাদে উঠে আবার ছাদ থেকে জাল কিভাবে জেলেদের হাতে পৌছে ? এ প্রশ্নে উত্তর কে দেবেন ?

উপজেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি জেলে সমিতির সভাপতি এনায়েত হোসেন হাওলাদার এবং জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক বাদশা বাঘা জানান প্রশাসন এবং সমিতির সাথে সমন্বয় করে কাজ করার কথা। সেক্ষেত্রে মৎস্য অফিস, নৌ পুলিশ ফাড়ি, কোষ্টগার্ড তাদের কোন সহায়তা করছেন না। অবৈধ জাল আটক, জাল পোড়ানো, অবৈধ নৌকা আটকের পর টেন্ডার বা জরিমানা এমনকি মামলা হলেও সেখানে সমিতিগুলোকে আহব্বান করছে না প্রশাসন। কোন তথ্য দিলে সেখানে ও বিপদ- ঐ সংকেত পৌছে যায় জেলেদের কাছে। সম্প্রতি বেশ ক’টি নৌকা এবং জাল পুলিশ ফাড়ি থেকে আবার চলেগেছে জেলেদর কাছে। রাতে জাল আটক করে ক’দিন বাদে পুলিশ তাদের আবার অবৈধ জাল নৌকা পৌছে দেন জেলেদের কাছে। বাঘা জানান অবৈধ জেলেদের সাথে প্রশাসনের একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে।

সম্প্রতি বাধাজাল সম্পর্কে তথ্য দিলে সেখানে খবর পৌছে যায়। আবার কখনও দু একটি জাল আটক হলে তা আবার পৌছে দেয়। পোড়ানোর সময় আমাদের সমিতিকে অবহিত করা লাগে না। তাদের সমিতির করনীয় কী ?
উপজেলা জাতীয় মৎস্যজীবী জেলে সমিতির আহবায়ক জাকির হোসেন শিকদার জানান- সমিতির কাজ হচ্ছে সাধারণ জেলেজের সহায়তা করা। অবৈধ জাল এবং জেলেদের চিহ্নিত করে প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিহত করা। সে ক্ষেত্রে আমরা কোন তথ্য দিলে আমলে নেয় না প্রশাসন। তাদের যে মাঝি রয়েছে মাঝিদের মাধ্যমে সংবাদ পৌছে হচ্ছে অবৈধ জেলেদের কাছে।

মাঝে মাঝে জাল এবং অবৈধ নৌকা আটক বা জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে সে ক্ষেত্রে প্রশাসন একক ভাবে কাজ করেন। আমাদের সমিতিগুলোকে অবহিত করার কথা থাকলেও তা কখনও করছে না প্রশাসন। নৌ পুলিশ অবৈধ বেড়জাল, কারেন্ট জাল, বাধাঁজাল আটক করে উপজেলায় নিয়ে আসে। সেগুলো পুলিশ ফাড়ির ছাদে উঠান। দাম বুঝে সেগুলো রাতের আধারে জেলেদের মাধ্যমে বিক্রি করে। নামকাওয়াস্তে মাসান্তে কিছু জাল পোড়ানো হচ্ছে। আসলে এই কি নিয়ম ?

নৌ পুলিশ ইনচার্জ জানান- অভিযান শেষে জাল এবং নৌকা আটক হলে উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয় পোড়ানো হয়। অনেক সময় একটু দেরি হয়। ছাদে জাল উঠানোর বিষয় জানতে চাইলে জানান এটা হেফাজতে রাখার জন্য। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অনিল চন্দ্র জানান- তাদের অভিযান শতভাগ সফল- এখানে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে। সমন্বয় করেই কাজ করা হয়। হিজলা কোষ্টগার্ড জানান- দিনশেষে তাদের আটক কৃত জাল প্রশাসনের সহায়তায় সাথে সাথে পোড়ানো হচ্ছে। এ বিষয় কোন মতোভেদ থাকার কথা নয়।

289 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন