আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২২
বিজয় নিউজ :: মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন ভূমিহীনদের তালিকার সঙ্গে ৪২ বিত্তবানদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৭২ একর খাসজমি দলিল করে দেওয়ার ঘটনায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করেছে কলাপাড়া থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক মামলাটি করেন। স্মৃতি রয়েগেছে হিজলায়।
এর আগে বুধবার সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশালের রুপাতলি আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির এর আগে বরিশালের হিজলা উপজেলায় থাকাকালিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই ধরণের কর্ম করেছিলেন। এ নিয়ে হিজলা উপজেলায় ও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। হিজলা ভুমি অফিস সূত্র জানিয়েছে, সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের কর্মস্থল হিজলা থাকলেও তাকে প্রেসনে কলাপাড়ায় রাখা হয়েছে। তার বেতন ভাতাদি হিজলা থেকেই তোলা হচ্ছে। তবে গ্রেফতার বিষয়ে হিজলা ভুমি অফিসে তার কোন তথ্য জানা নেই বলে দাবি তাদের।
মামলায় বলা হয়েছে, মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন, ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক খাসজমিসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়ার লক্ষ্যে ২৮ মার্চ, ২৪ এপ্রিল ও ১৯ মে তিনটি স্মারকে ১৯৫টি বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়াত রেজিস্ট্রি কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরকে ক্ষমতা প্রদানপূর্বক তার স্বাক্ষর সত্যায়ন করে খেপুপাড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে পাঠানো হয়।
কিন্তু সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির অফিসের মূল ফরোয়ার্ডিং গোপন করে নিজের তৈরি স্ক্যান করা ফরোয়ার্ডিং দিয়ে তিন দফায় আরও ৪২টি বিত্তবান, কথিত ভূমিহীনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নামে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাসজমির দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন।
এ বছরের ১৯ এপ্রিল ২২টির স্থলে ৩১টি, ২৪ এপ্রিল ১২০টির স্থলে ১৩২টি এবং ১৯ মে ৫৩টির স্থলে ৭৪টি কবুলিয়াত দলিল রেজিস্ট্রি করে নেন সার্ভেয়ার হুমায়ুন।
এ অতিরিক্ত ৪২টি দলিলে সর্বোচ্চ তিন একর থেকে নিচে এক একর করে খাসজমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে। ৬০ এর দশক থেকে ২০০২-২০০৩ দশকের তালিকার কেস নাম্বার থেকে ৪২টি নামে এ পরিমাণ খাসজমি মুজিব শতবর্ষের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। কবুলিয়াতের দুই শতক লেখা জায়গায় হাতের লেখায় কাটাছেঁড়া করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের মোবাইল নাম্বার বন্ধ রয়েছে। তাকে অফিসেও পাওয়া যায়নি।
কলাপারা থানার ওসি মোঃ জসিম বলেন গ্রেফতার সার্ভেয়ার হুমায়ুনকে
তাকে চাকরি থেকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
মুজিববর্ষের সব কবুলিয়াত রেজিস্ট্রিতে দুই শতক খাসজমি দেওয়ার কথা লেখা থাকলেও কীভাবে একে একে ৪২টি কবুলিয়াত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন একর খাস জমির। ওই অফিসের এক স্টাফের নামেও বন্দোবস্ত দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। বর্তমানে এ ৭২ একর খাস জমির মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
সাব রেজিস্ট্রার রেহেনা পারভিন বলেন, যেহেতু ভূমিহীন, গৃহহীনদের দলিল ছিল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সই ছিল। সার্ভেয়ার তাড়াহুড়া করে নামজারির কথা বলেছেন। তাই সরল বিশ্বাসে প্রত্যেক পাতা দেখিনি। এখন তো দেখি এ অবস্থা। তবে ওই ৪২টি কবুলিয়ত দলিল বাতিল করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসীম জানান, মামলাটি একজন এসআইকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।