২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত জেলিফিসে সয়লাভ

আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৪

বিজয় নিউজঃঃ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় ভেসে আসছে হাজার হাজার মৃত জেলিফিস। বিস্তীর্ণ সৈকত জুড়ে পড়ে থাকা মৃত জেলিফিশ এর পচা গন্ধে পর্যটকরা অতিষ্ঠ। আর সাগরে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে জেলেরা। কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকে লেম্বুর চর এলাকা থেকে পূর্বে গঙ্গামতি পর্যন্ত মরা জেলিফিশ পড়ে রয়েছে। এগুলোর একেকটির ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি।
কুয়াকাটা এলাকার জেলে সোলায়মান বলেন, মৃত জেলিফিসের কারনে আমরা এখন সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। জাল ফেললেই মরা জেলিফিশ উঠছে। এগুলো শরীরে লাগলে অসহনীয় চুলকানি হচ্ছে। তাই মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি।
জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, মৃত জেলিফিসের কারনে সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। প্রতি বছরই এ সময়ে জেলিফিশ দেখা যায়। তবে এবারের পরিমাণ খুব বেশি। তিনি বলেন, একেকটি জেলিফিসের ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি।
সমুদ্রগামী মাছ ধরা ট্রলারের মালিক আলীপুর এলাকার হোসেন আলী বলেন, আমার তিনটি মাছ ধরা ট্রলার রয়েছে। মৃত জেলিফিশের কারণে প্রায় এক মাস ধরে জেলেরা সাগরে জাল ফেলতে পারছে না। ট্রলারে কর্মরত জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে আছে।
কুয়াকাটা হোটেল মালিক ইসহাক শেখ বলেন, রমজান মাসে কুয়াকাটায় এমনিতেই পর্যটকের সংখ্যা কম। তার ওপর সৈকতের বিশাল অংশজুড়ে মরা জেলিফিশের দুর্গন্ধে পর্যটকরা অতিষ্ঠ। যদিও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকার জেলিফিশগুলো মাটি চাপা দিয়ে দুর্গন্ধ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছেন। তারপরও সৈকত-জুড়ে মরা জেলিফিশের উপদ্রবে গোটা পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে।
এবিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো: মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে পানিতে বিষাক্ততা ও লবনাক্ততা বেড়ে গেলেই জেলিফিস মারা যায়। পরে তা সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসে। গত বছরও এইসময়ে মৃত জেলিফিস সৈকতে ভেসে এসে ছিলো। তবে তা পরিমানে খুবই কম ছিলো। এবার এর পরিমান আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তার মতে জেলিফিসের বসবাসের এলাকায় এবার পানিতে লবন বা বিষাক্ততার পরিমান বেড়ে যাওয়ায় মারা যাচ্ছে। ওরা দ্রুত স্থান পরিবর্তন করতে না পারার কারনে মৃত্যুর সংখাও ব্যাপক। মানবিক কার্যক্রমের কারনে বৈশ্বিক উষ্নতা ও রাসাযনিক বর্জ্য পানিতে ফেলার কারনে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। এর ফলে সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র ধংষের মুখে পরেছে। আমাদের এখনই এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রিয় ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
আন্তর্জাতীক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোফিশ’র কলাপাড়ার সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, মূলত সাগরের পানির বিষাক্ততা ও গভীর সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে মৃত জেলিফিশের পরিমাণও বেড়ে যায়। সামুদ্রিক কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেলেও জেলিফিশের আধিক্য ঘটে। কেননা জেলিফিশ সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাবার।
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াছিন জানান, প্রতি বছর এ সময়টাতে সাগরে জেলিফিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মূলত ছোট ছোট মাছ ও মাছের ডিম খাওয়ার জন্য এসব জেলিফিশ উপকূলের কাছাকাছি আসে। তখন বালিয়াড়িতে আটকে এগুলো মারা যায়। এছাড়া এটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও ঘটতে পারে। প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। তবে এ বছর বেশি পরিমাণে জেলিফিশ সৈকতে দেখা যাচ্ছে। ###

42 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন