৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

উপজেলা নির্বাচন বিএনপির সাবেক নেতাকে সমর্থন দিলেন আ.লীগের এমপি

আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪

নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃঃআসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহমদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিএনপির সাবেক নেতা শিল্পপতি আসাদুজ্জামান নয়নকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি (গত শনিবার রাতে) তার নির্বাচনি এলাকার সরিস্তলা এলাকায় একটি ওরস মাহফিলে বক্তব্য দিতে গিয়ে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে তিনি তার পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি ওই প্রার্থীকে ডেকে এনে তার পাশে দাঁড় করিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে

এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া ভিডিওতে শোনা গেছে, ওই সভায় এমপি মো. আহমদ হোসেনে বলেন, আমি নয়নকে এনেছি। এ সময় তিনি নয়নকে ডেকে বলেন- নয়ন এদিকে আসো। চেয়ারম্যানদের কাছে গেলে বলেন- আমাকে ১০ হাজার টাকা দাও, ১০ হাজার টাকা দাও। আমি তোমাকে টিউবওয়েল দেব এটা দেব সেটা দেব। পরে টাকারও খবর নাই আর কোনোকিছুরই খবর নাই। আমরা কি চেয়ারম্যান চাই তখন উপস্থিত লোকজন বললেন হ্যাঁ। আহমদ হোসেন বললেন, কোন চেয়ারম্যান চাই আমরা; পাবলিকরে মাইরা টাকা মাইরা খায়, প্রতারণা করে বেইমানি করে এমন চেয়ারম্যান চাই না।

এ সময় নয়নের হাত ধরে হাত উঁচু করে মো. আহমদ হোসেন বললেন, এই নয়ন আসবে টাকা নেবে না, সে টাকা দেবে। আমাকে এমপি বানাইছেন আপনারা! আমার একটা সহযোগী লাগবে না? কী? মেসি কি একা একা গোল করতে পারে? টিম লাগে না? কাজেই চেয়ারম্যানটাও আমার টিমের নয়ন। তারে আমি চাই। উপস্থিত লোকজন বলেন, নয়নকে আগে আপনারা চিনেন। চেয়ারম্যানটা আমার টিমের হইতে নয়নরে দিয়া কাজ হবে। আমি এমপি থাকলে, নয়ন ভালো চেয়ারম্যান হবে।

তিন মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়- আমি এমপি, আমি জেলা পরিষদের অ্যাডভাইজার; সব কমিটিরই আমি প্রধান। সবকিছু আমার অ্যাডভাইসে চলবে। এ সময় তিনি ডান হাত দিয়ে বুক থাপড়িয়ে বলেন, সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণে চলবে। আমাকে কাজ করতে দেবেন? তাহলে নয়ন যে মার্কা নিয়ে আসবে তাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান বানাতে হবে। আমি এমপি আমি নয়নকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই। ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য আমার একজন নয়নের দরকার…।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সরাসরি কাউকে সমর্থন দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মৌন সমর্থন তো থাকতেই পারে।

একটি সভায় একজন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। তফসিল ঘোষণা হলে আমি কারো পক্ষে কথা বলব না। নয়ন তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন তো আরও অনেকেই আছেন তাতে কী?

এদিকে আসাদুজ্জামান নয়নকে এমপির সমর্থন দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে বলেন, এভাবে প্রকাশ্যে একজন এমপি কোনো প্রার্থীকে সভা-সেমিনারে নিজের প্রার্থী বলে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন না। আর আসাদুজ্জামান বিএনপির অঙ্গসংগঠন তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা ছিলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে এলাকায় অংশ নিয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তারেকের ছবি দিয়ে পোস্টার করেছেন। এভাবে বিএনপির একজনকে নিজের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির একজন পদবিধারী নেতা হিসেবে তিনি এ কাজ করতে পারেন না।

পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন মালু বলেন, আসাদুজ্জামানকে বিএনপির নেতা হিসেবে চিনি। তাকে এমপিসাব এভাবে নিজের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন না। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে এটা করা উচিত হয়নি।

এদিকে আসাদুজ্জামান নয়নের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

24 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন