আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২০
বিজয় নিউজ:: ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহিদের রক্তের ঋণ পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।’
বৃহস্পতিবার সংসদের ২০২০ সালের প্রথম অধিবেশন ও একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সব স্তরে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনসহ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘এ বছর আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে, ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে– এটাই জাতির প্রত্যাশা।’
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা; সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল; নারীর ক্ষমতায়ন; শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও বিকাশ; জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনিসেফ কর্তৃক মর্যাদাপূর্ণ ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হয়।
সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ, ২০১৮’ চূড়ান্ত করে গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ-ভাতা সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনাজনিত আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সহকারে স্ব-স্ব ধর্ম চর্চা করতে পারে সে ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবগুলো নির্বিঘ্নে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হচ্ছে। ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার জনমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
ক্রিড়া ক্ষেত্রের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১২৫টি ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২ মার্চকে ‘জাতীয় ভোটার দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সাইবার অপরাধ তদন্তের জন্য মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত করার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করায় এক্ষেত্রে সরকার ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে।