৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শাক-সবজি চাষ করবেন যেভাবে মাটি ছাড়া

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০

বিজয় নিউজ:; বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের শহরে বসবাসকারী মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাটি ছাড়া সবজি চাষ। অল্প সময়ে ঝামলেহীন এ উপায়ে শাক-সবজি চাষ করা যায়। এখন মাটিবিহীন ছোট পাত্রে উৎপাদন হচ্ছে টমেটো, লাকশাক, লাউ, লেটুস, লাউ, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, খিরা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, মটরশুঁটিসহ নানা ফসল।

মাটি ছাড়া চাষাবাদের এই বিশেষ পদ্ধতির নাম হাইড্রোপনিক। গবেষকরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে বাড়ির বারান্দা, ছাদ, উঠানে প্লাস্টিকের পট বা পলি টানেলে অধিক শস্য চাষ করে পারিবারিক চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করা সম্ভব হবে। সেই সাথে অবসর সময়ও ভালো কাটে।

যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম বা জমি একেবারেই নেই, সেখানে পানিতে এ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে প্রথমে সাফল্য পান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানীরা। তাদের দেখানো পথে এখন এটি ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। পানিতে চাষাবাদের এ পদ্ধতির কেতাবি নাম ‘হাইড্রোপনিক পদ্ধতি। ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং প্রাচ্যের দেশগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন বেশ জনপ্রিয়।

শহরের বাসিন্দাদের যাদের কোনো জমি নেই, তারা পলি টানেল, টব, বালতি, জগ, বোতল, পাতিল, প্লাস্টিকের থালায় অনায়াসে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন করতে পারবেন। তিনি জানান, এই চাষাবাদে কোনো কীটনাশক বা আগাছানাশক প্রয়োজন পড়ে না। অনায়াসে গড়ে তোলা যায় অরগানিক ফসলের সম্ভার।

সঞ্চালন পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানগুলো যথাযথ মাত্রায় মিশিয়ে একটি ট্যাঙ্কে নেওয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা যায়। আর সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল উৎপাদন করা হয়।

ছাদে লাল শাকের চাষ পদ্ধতি
মাটির চেয়ে হালকা জৈবপ্রযুক্তির এই মাধ্যমের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে কোকোমাস (নারিকেলের ছোবড়া) ও কোকোডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়া থেকে পাওয়া গুঁড়া)। রাজধানীতে যারা বাস করছেন তারা কোকোডাস্ট পাবেন আগারগাঁওয়ের সব নার্সারিতে। পরিমাণে বেশি লাগে, তাই নিতে পারেন ৫০ কেজি ওজনের বস্তাভর্তি কোকোমাস। অন্যদিকে কোকোমাস পাওয়া যাবে লেপতোষক-জাজিম বানানোর দোকানে।

দোকান থেকে অল্প পরিমাণে কোকোডাস্ট নিলে তাতে খুদে জীবাণু বা ক্ষতিকর কোনো কিছুর উপস্থিতি থাকতে পারে। তাই তা শোধন করে নেওয়া ভালো। রাসায়নিকভাবে কৃষি পরীক্ষাগারে, গরম পানি ব্যবহার করে, সেদ্ধ করে কিংবা বালাই ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে কোকোডাস্টের বিশুদ্ধতা আনা যায়।

এবার বেড বা বিছানা তৈরির পালা। দৈর্ঘ্য হবে ১০ ফুট আর প্রস্থ ৩ ফুট। গভীরতা ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। চারপাশে পরপর ইট বিছিয়ে নিতে হবে। বেডের মাপ অনুযায়ী পলিথিন এমনভাবে বিছিয়ে নিতে হবে যাবে ইটও ঢাকা পড়ে। ইটের সঙ্গে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে সংযোগের প্রয়োজন নেই। বৃষ্টির পানি জমে গেলে সহজেই ইট সরিয়ে পানি অপসারণ করা যাবে।

৬-৮ ইঞ্চি গভীরতার ক্ষেত্রে বেডের নিচের দেড় থেকে ২ ইঞ্চি অংশ কোকোমাস দিয়ে খুব আঁটসাঁটভাবে পূর্ণ করতে হবে। এবার ওপরের বাকি অংশ কোকোডাস্ট দিয়ে পূর্ণ করতে হবে।

বেড তৈরির সময়ই নাইট্রোজেন, পটাস, সালফারসহ প্রয়োজনীয় সব সার নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানোর ৪-৫ দিন পর শাকের বীজ বুনে দিন। সাধারণত পুঁইশাক, লালশাক, ডাটাশাক, পালংশাক, পাটশাক, লাউ, রাই বা সরিষা শাক থেকে শুরু করে ধনিয়া পর্যন্ত খুব ভালোভাবে চাষ করা যায়।

একই বেডে একই বীজ একদিনে না বুনে পরপর তিন ধাপে তিন দিনে ফেললে শাক পর্যায়ক্রমে বেড়ে উঠবে। এতে অনেক দিন ধরে খাওয়া যাবে। পাখির হাত থেকে রক্ষা পেতে চারপাশে ও উপরে জাল টেনে দেওয়া যেতে পারে।

যেভবে যত্ন নেবেন
প্রতিদিন পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে অল্প সার দেওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত সার শাকের পাতা ঝলসে দিতে পারে, এমনকি গাছ মারাও যেতে পারে। তাই সার দেওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।

যেসব কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
নগরকৃষিতে সবার আগে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হয়। আর এই মাধ্যমে তা আরও জরুরি। মাটির টবে ভুল করে দু-একদিন পানি দেওয়া না হলেও হয়তো গাছ টিকে থাকে। কিন্তু কোকোডাস্টের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকাল-বিকেল পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। তবে ছাদেই যেহেতু পানির ট্যাংক থাকে, তাই সহজেই পাইপ দিয়ে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়।

নিচে পলিথিন থাকে বলে ছাদ ঘামতে পারে। নতুন ছাদের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা না হলেও পুরোনো ছাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতি তিন মাস পরপর বা এক ফসল পর পলিথিনসহ বিছানো বেডের স্থান বদলে দিতে হবে।

143 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন