২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

জমিই নুরুবাবুর্চির কাল, কিলার ভাড়ায় করে ভাইকে হত্যা !

আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২১

সাইফুল ইসলাম:: হিজলায় জমির বিরোধকে কেন্দ্র করেই ভাইকে ভাই হত্যা করেছে এমন অভিযোগ পরিবারের। ভাই নুরু বাবুর্চির সম্পত্তি অপর ভাই দুলাল বাবুর্চি আত্মসাৎ করতেই কিলার ভাড়া করে ছোটভাই নুরু বাবুর্চিকে খুন করার অভিযোগ তুলছেন নুরু বাবুর্চির পরিবার।
নিহতের স্ত্রী খাদিজা বেগম এবং সন্তানদের দাবি তার বড় ভাসুর দুলাল বাবুর্চি স্বামী নুরু বাবুর্চির জায়গা জমি দখল করতেই খুনের পথ বেছে নেন।
জানা যায়, গত ১০ আগস্ট বিকালে মুলাদী উপজেলার নয়াভাঙ্গনী নদীর চরডিক্রী এলাকায় একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে সংবাদ দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মুলাদি থানায় নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে নুরু বাবুর্চির স্ত্রী ও স্বজনরা থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

নুরু বাবুর্চি গত ৭ আগস্ট বিকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওই ঘটনায় খাদিজা বেগম বাদী হয়ে দুলাল বাবুর্চি ও কাসেম খানসহ ১৪ জনকে আসামি করে মুলাদী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহতের স্ত্রী খাদিজা বেগম জানান, শনিবার বিকালে হিজলা উপজেলার চরপত্তনীভাঙ্গা গ্রামের শহীদ খানের ছেলে দুর্ধর্ষ কিলার কাশেম খান ফোন করে নুরু বাবুর্চিকে কথা শোনার জন্য বলেন। কাশেম খানের সঙ্গে দেখা করার জন্য নুরু বাবুর্চি ওই দিন সবাইকে বলে বাসা থেকে বের হন।

সন্ধ্যার পরে বাসায় না ফিরলে তার সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন স্ত্রী স্বজনরা। ওই সময় মোবাইল ফোনে তিনি কাশেম খানের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানিয়ে ছিলেন।
রাত ১০টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পান স্ত্রী ও ছেলেরা। আত্মীয়স্বজন ও সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ করে নুরু বাবুর্চিকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানরা ৯ আগস্ট হিজলা থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যান। সেখানে থানার ওসি অসীম শিকদার জিডি না নিয়ে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং নুরু বার্বুচির তিন ছেলেকে জেলহাজতে পাঠান।
খাদিজা বেগম আরও জানান, তার শ্বশুর মৃত হাচেন বাবুর্চি অনেক জায়গা জমি রেখে গেছেন। সেই জমি সবই তার ভাসুর দুলাল বাবুর্চি ভোগদখল করেন। নুরু বাবুর্চি ছোট হওয়ায় তাকে শুধুমাত্র একটি বসতঘর করার জায়গা দেওয়া হয়েছে।
প্রায় বছর পাচেক আগে জমিজমা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। দুলাল বাবুর্চি বেশ কয়েকবার ছোটভাই নুরু বাবুর্চিকে হত্যাচেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সর্বশেষ ভাড়া করা ঘাতক কাশেম খানের সহযোগিতায় দুলাল বাবুর্চি, তার ছেলে হানিফ বাবুর্চি, রিয়াজ বাবুর্চি, জসিম ডিলারসহ ১৪ থেকে ১৫ জন মিলে নুরু বাবুর্চিকে হত্যা করে। এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন জনৈক গুয়াবাড়িয়ার জনা কয়েক ব্যাক্তি। এরা দুলাল বাবুচিকে নানা ভাবে ব্যবহার করছেন।
নুরু বাবুর্চির বড়ছেলে ইমরান বাবুর্চি জানান, তার পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতকরা তার পিতার ডান হাত কেটে ফেলেছে। চোখ উপড়ে ফেলে হাত-পায়ের রগ কর্তন করে, ভুঁড়ি কেটে অমানুষিক নির্যাতন করে খুন করেছে।
শুধু তাই নয়, লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে হাত-পায়ে বালুর বস্তা বেঁধে নয়াভাঙ্গনী নদীতে ফেলে দিয়েছে। লাশ পাওয়ার সংবাদে অনেক খুনি আত্মগোপন করেছে। অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশ ও সিআইডি তদন্ত করলে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে দাবি তাঁদের।
নুরু বাবুর্চির মেজো ছেলে এনামুল বাবুর্চি বলেন, আমার পিতার হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একটি বিশেষ মহল উঠেপড়ে লেগেছে। ওই মহলটি আমার পিতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। খুনিরা টাকা দিয়ে হিজলা থানা পুলিশ ও কিছু নামধারী সংবাদকর্মীদের কিনে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুলাল বাবুর্চি হত্যাটিকে ভিন্ন খাতে প্রহিতের চেষ্টা করছে।
এদিকে দুলাল বাবুর্চির সাথে স্বাক্ষাত করতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকবার আমাদের প্রতিনিধি দুলাল বাবুর্চির বাড়ি গেলেও সন্ধান মেলেনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজয় নিউজকে জানান, হত্যার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম মাকসুদুর রহমান বিজয় নিউজকে জানান, লাশ উদ্ধারের পর স্বজনরা চিহ্নিত করেছেন। নিহতের স্ত্রী হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার যথাযথ তদন্ত এবং আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

787 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন