২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বাবা-মা কেন নেক সন্তান চান?

আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১

ধর্ম ডেস্ক:: বাবা-মার জন্য নেক সন্তান পরকালের অমূল্য পূঁজি। যখন মানুষের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তখন নেক সন্তানই বাবা-মার জন্য আমল জারির অনন্য মাধ্যম। কারণ সন্তানের প্রতিটি ভালো কাজেই বাবা-মার আমলনামায় সাওয়াব পৌঁছতে থাকে। নেক সন্তান যে বাবা-মার জন্য নেক আমলের অফুরন্ত ভাণ্ডার।

এ কারণেই সন্তান জন্মের পর প্রত্যেক বাবা-মা যেন চোখের সামনে স্বর্গ দেখতে পায়। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। সন্তানের জন্য বাবা-মার এ আনন্দ, হৃদয় নিংড়ানো আদর-সোহাগ ও ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হয় এ সন্তান। কোরআনের ভাষায় সন্তান যে বাবা-মার নয়ন জুড়ানো শোভা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘ধন, ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের অলংকার-শোভা।’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ৪৬)

এ কারণে সন্তান-সন্তুতি ও পরিবারের লোকদের জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে তা ওঠে এসেছে কোরআনের বর্ণনায়। বাবা-মা নিজ পরিবারের জন্য এভাবে দোয়া করবেন-

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণ : রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’

অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।’ (সুরা ‍ফুরকান : আয়াত ৭৪)

উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে, দুনিয়াতে হজরত মারইয়ামও ছিলেন একজন নেক সন্তান। যাকে দেখে তার খালু হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামও বৃদ্ধ বয়সে নেক সন্তান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিলেন। আল্লাহর কাছে কাছে নেক সন্তান চেয়ে দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর সেই দোয়া কবুল করে তাকে নেক সন্তান দান করেছিলেন।

সুতরাং দুনিয়ার প্রত্যেক বাবা-মার উচিত, মহান আল্লাহ কাছে নেক সন্তান কামনা করা। আল্লাহর কাছে বার বার নেক সন্তান কামনা করলে তিনি বান্দাকে নেক সন্তানই দান করবেন। তাই নেক সন্তান কামনায় বার বার এ দোয়াটি করা-

رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء

উচ্চারণ : ’রাব্বি হাবলি মিল্লাদুংকা জুররিয়্যাতান ইন্নাকা সামিউদ দোয়া।’

অর্থ : হে আমার প্রভু! তোমার কাছ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৩৮)

নেক সন্তান চাওয়ার ফলাফল

দুনিয়ায় সব নেক সন্তানই বাবা-মার জন্য পরকালের সঞ্চয়পত্র। দুনিয়াতে বাবা-মার সামনে নেক সন্তান যেমন বিনয়ী তেমনি বাবা মার জন্য তাদের মৃত্যুর পরও দু’হাত তুলে দোয়া করে। তাও ওঠে এসেছে কোরআনের বর্ণনায়-

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ : ‘রাব্বিরহামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’

’হে প্রভু! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)

সন্তানের প্রতি বাবা-মার দায়িত্ব ও কর্তব্য

দুনিয়া ও পরকালের সব কল্যাণে সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করা জরুরি। এ দায়িত্ববোধ জোরদার করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে সন্তান-সন্তুতিদের জান্নাতের প্রজাপতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের শিশুরা জান্নাতের প্রজাপতি। (বুখারি)

সন্তান-সন্তুতি বাবা-মার জন্য শুধু পরকালের সম্বল লাভের মাধ্যমই নয়, বরং দুনিয়ায় কল্যাণ ও রিজিক লাভের উপায়ও বটে। হাদিসে এসেছে-

‘তোমরা শিশুদের ভালোবাস এবং তাদের প্রতি দয়া কর। তাদের সঙ্গে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে পূর্ণ কর। তাদের কল্যাণে তোমরা রিজিক পেয়ে থাক।’ (বুখারি-মুসলিম)

সন্তানকে যথাযথভাবে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। তবেই সন্তান হবে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের অন্যতম মাধ্যম। কুরআন সুন্নাহের ঘোষণা অনুযায়ী সন্তান শুধু দুনিয়ার কল্যাণ নয় বরং পরকালেরও পুঁজি।

যারা পরকালে বিশ্বাস করে, কবর, হাশর, মিজান আর হাউজে কাওসারে পেয়ালায় বিশ্বাসী তাদের কাছে সন্তান পরকালের সঞ্চয়, পুঁজি। এ সন্তান পরম মায়া-মমতা ও ভালোবাসার ডানায় ভর করেই বাবা-মা পাড়ি দেব অনন্তকালের যাত্রা।

তাইতো বুদ্ধিমান সব বাবা-মার উচিত নিজ সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। আর তাতেই দুনিয়া ও পরকালে সব বাবা-মা হবে সফল। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকেও প্রমাণিত-

১. হজরত সাদ্দান ইবনে আওস বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি যে নিজেকে চিনতে পেরেছে এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কাজ করছে। আর সেই ব্যক্তি অসহায় যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণে জীবন পার করছে। কৃষক আদর-যত্নে ফসল বুনছে, মা-বাবা পরম যত্নে গড়ে তুলছেন সন্তানের ভবিষৎ। বিশ্বাসীরা নির্মাণ করে পরকালের রাজপ্রাসাদ।’

এ কারণেই বাবা-মা যখন তাদের নেক সন্তানকে দেখে তখন তারা মুগ্ধ হয়। আদর-যত্নে গড়া সন্তানের দিকে বার বার তাকায়। কেননা এ সন্তানই যে, তার মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য রাজপ্রাসাদ তৈরির অনন্য কারিগর। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মানুষ যখন মারা যায়, তখন তিনটি আমল ছাড়া সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তাহলো- সদকায়ে জারিয়াহ, উপকারী ইলম বা জ্ঞান আর সুসন্তান, যে তাদের জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম)

বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে

সন্তানের দোয়া ও নেক আমলের অংশীদার বাবা-মা। সুসন্তান রেখে যাওয়ার মানেই হলো বাবা-মার জন্য পরকালের অবিরত সঞ্চয়পত্র খুলে যাওয়া। এ নেক সন্তানের উসিলায় মৃত্যুর পর বাবা-মার নেক আমল চালু থাকবে। সুসন্তানই হবে পরকালের মুক্তির সর্বোত্তম উপলক্ষ। পরকালের কথা স্মরণ করে সব বাবা-মা নিজেদের সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষায় গড়ে তোলা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেক সন্তান দান করুন। সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। এসব সন্তান-সন্তুতিকে পরকালের নাজাতের ওসিলা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

139 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন