আপডেট: এপ্রিল ২৭, ২০২২
বিজয় নিউজ:: বরিশালে নগদ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভাতার টাকা প্রতারণার বিষয়ে সচেতন করতে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় প্রতারণা করে অর্ধশতাধিক বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের সরকারি ভাতার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। আর কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে বাবুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
প্রতারনার শিকার বেশ কয়েকজন ভাতাভোগী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মোবাইলে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরকারি ভাতার টাকা দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে তাদের ফোনে ক্ষুদে বার্তা আসে। এরপর এক ব্যক্তি ফোন করে বলেন, ভুলে ক্ষুদে বার্তাটি পাঠানো হয়েছে। ক্ষুদে বার্তায় পাঠানো পিন কোডটি বলতে অনুরোধ করেন। পিন কোডটি তারা সরল মনে ওই ব্যক্তিকে বলে দেন। কিছুক্ষণ পর নগদ অ্যাকাউন্টে ঢুকে দেখেন তাদের সব টাকা ক্যাশ আউট করা হয়েছে।
কেউ কেউ অভিযোগ করেন, তারা কোনো ফোন বা ক্ষুদে বার্তা পাননি। তারপরও নগদ পিন নম্বর পরিবর্তন করে তাদের সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় রোববার (২৪ এপ্রিল) বাবুগঞ্জ থানায় জিডি করেন উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামের এনায়েত শরিফ (৫৩)। জিডি নম্বর ৯৮৩।
জিডিতে এনায়েত শরিফ উল্লেখ করেন, তার মোবাইলে নগদ অফিসের পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে বলেন, আপনার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। দয়া করে আপনার মোবাইলে প্রেরিত কোড নম্বরটি বলেন। কোড নম্বর বলার সঙ্গে সঙ্গে তার নগদ অ্যাকাউন্টে থাকা দুই হাজার ২৮৫ টাকা উধাও হয়ে যায়।
রাকুদিয়া এলাকার শহিদ হাওলাদার জানান, প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনি প্রতি মাসে ভাতা পেয়ে আসছেন। এবারের ভাতার টাকায় ঈদের কেনাকাটা করবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন। কিন্ত প্রতারক চক্র অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সব টাকা তুলে নিয়েছে। এ ঘটনায় ২৪ এপ্রিল তিনি বাবুগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন।
উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আলাউদ্দিন রাজের নগদ অ্যাকাউন্টে ভাতার ৬ হাজার ৫০০ টাকা ছিল। প্রতারক চক্র ফোন করে তার অ্যাকাউন্টের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে নগদ অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন টাকা নেই। এ ঘটনায় তিনি এয়ারপোর্ট থানায় একটি জিডি করেছেন।
দেহেরগতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে ভাতাভোগী অনেকের টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
চাঁদপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন রাড়ী বলেন, প্রায় দিনই দু-চারজন অসহায় ও গরিব ভাতাভোগী অভিযোগ করছেন, তাদের নগদ অ্যাকাউন্টের টাকা উধাও হয়ে গেছে।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী দুই হাজার ৪০০ জন, বিধবা তিন হাজার ৯২৬ জন ও বয়স্ক ৯ হাজার ৮৪ জন। এসব ভাতাভোগী মানুষ নগদের মাধ্যমে ভাতা পাচ্ছেন।
সমাজসেবা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ভাতার টাকার জন্য উপজেলা থেকে পে-রোল করা হয়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা নগদের মাধ্যমে ভাতাভোগীদের মোবাইলে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে কতজনের টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে প্রতিদিনই বেশ কয়েকজন ভাতাভোগী অফিসে এসে এ ধরনের অভিযোগ করছেন।
তারা আরও বলেন, বেশিরভাগ ভাতাভোগীদের কাছে ০৯৬৩৮৬৪৫১৫৬ ধরনের নম্বর থেকে ফোন আসছে। বর্তমানে অভিযোগ পাচ্ছি, সম্প্রতি কল বা ক্ষুদে বার্তা পাননি তারপরও নগদ অ্যাকাউন্টের পিন কোড পরিবর্তন করে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এসব শুনে ধারণা করা যায়, প্রতারক চক্রটি তথ্যপ্রযুক্তিতে বেশ পারদর্শী।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভাতাভোগী অধিকাংশের অ্যাকাউন্ট খুলে দিযেছেন নগদের পার্টটাইম কর্মীরা। অ্যাকাউন্ট খোলার পর গোপন পিন নম্বর ওই পার্টটাইম কর্মীদের জানা ছিল। প্রতারক চক্রের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মসজিদের ইমাম এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতারণার শিকার কয়েকজন ভাতাভোগী থানায় জিডি করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমীনুল ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ ভাতাভোগী সহজ-সরল এবং তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের ধারণা কম। তাই সহজেই প্রতারকরা তাদেরকে ফাঁদে ফেলতে পারছেন। ভাতাভোগীদের সচেতনা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে নগদের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তারাও এ ধরনের ঘটনা রোধে তাদের যা করণীয় তা করবেন বলে জানিয়েছেন।