৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

অ্যালার্জিজনিত রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২২

বিজয় নিউজ:; শীত আসন্ন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরইমধ্যে শীতের প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে। রাজধানীতেও অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। এ সময়ে বিভিন্ন রকম রোগে আক্রান্ত হন অনেকে। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত নাক কান ও গলার সমস্যা বেশি দেখা যায়। এসব সমস্যা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সেটাই জানাচ্ছেন পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান, গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলাম।

* শীতের শুরুতে অনেকে কোল্ড অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

** সর্দি, নাক বন্ধ থাকা, জ্বর জ্বর ভাব ও শরীর ম্যাজম্যাজ করা, হাঁচি, খুসখুসে কাশি, গলা ব্যথা, হালকা মাথা ধরা-এসবই কোল্ড অ্যালার্জির লক্ষণ। গরম থেকে ঠান্ডা পরলে অর্থাৎ আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনে অনেকের শরীর চট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না বা দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। ফলে এ উপসর্গগুলো দেখা দেয়। একে আমরা খুব সহজে প্রতিরোধ করতে পারি। যেমন-ঠান্ডায় না যাওয়া বা গেলেও বেশিক্ষণ ঠান্ডায় না থাকা, গরম জামা-কাপড় পরিধান করা, গলায় মাফলার, কানে টুপি পরা, কুসুম গরম পানি খাওয়া বা ঠান্ডা পানি/পানীয় না খাওয়া, গলা ব্যথা ও কাশি হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা বা নাক দিয়ে মেনথলের ভাপ নেওয়া-এসবই ঘরে বসে করা সম্ভব। এসির তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখা, ফ্যান খুব জোরে না ছাড়া, এদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। জ্বর ও কাশি তিন দিনের বেশি হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার কারণ নির্ণয় করে স্পেসেফিক চিকিৎসা দেবেন। এ সমস্যাগুলোতে রোগী প্রয়োজনে এন্টি অ্যালার্জিক ওষুধ যেমন-ক্লোরফেনিরেমিন, সেট্রিজিন, লোরাটিডিন, বিলাসটিন ও মাস্ট সেল স্ট্যাবিলাইজার যেমন-মল্টিলুকাস্ট খেতে পারেন।

* এন্টি অ্যালার্জিক ওষুধ কতদিন খাওয়া যায়?

** অ্যালার্জির সঠিক কারণ যদি নির্ণয় করা যায় এবং তা থেকে দূরে থাকা যায় তাহলে এ ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কারো ঠান্ডায় কারো ধুলাবালিতে অ্যালার্জি থাকে। কারো পোলেন বা পরাগরেণুতে, ঘাসে বা কারো ঘরের ডাস্ট মাইটে অ্যালার্জি থাকে। বাদাম, ডিমের সাদা অংশ, গরুর দুধে, ইলিশে কারো কারো অ্যালার্জি থাকে। কিছু ওষুধেও অ্যালার্জি হতে পারে। যদি অ্যালার্জির কারণ নির্ণয় করা না যায় তবে সম্ভাব্য কারণগুলোকে রোগীকে জানিয়ে তা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। ঘরের কার্পেট, মোটা পর্দা, পোষা প্রাণী থেকেও অ্যালার্জি হয়। অ্যালার্জির ওষুধ যখন উপসর্গ দেখা দেয় তখন খেলেই চলে, এন্টিবায়োটিকের মতো কোর্স কমপ্লিট করার প্রয়োজন হয় না। তবে কারো দীর্ঘ সময়ের জন্য এন্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হলে তা চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা ভালো।

* অনেকে খুসখুসে কাশিতে অনেকদিন ধরে ভোগে। এর প্রতিকার কী?

** একে ড্রাই ইরিট্যান্ট কফ বলে। নাক থেকে শুরু করে ফুসফুস পর্যন্ত যে কোনো অংশে যদি ইরিট্যান্ট বা উত্তেজনা হয়, প্রদাহ বা ইনফেকশন হয়-তাহলে এমনটি হয়। এর চিকিৎসা অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত। তিনি রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস নিয়ে ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাশির সঠিক কারণ নির্ণয় করবেন। এর প্রধান কারণ সাইনোসাইটিস, এর সঙ্গে যুক্ত হয় নাকের হাড় বাঁকা বা নাকে পলিপ। তাপমাত্রার হঠাৎ পরির্তনে গলায় প্রদাহ বা ফ্যারিনজাইটিসও হয়, কথা বলার সময় এক্ষেত্রে কাশি বাড়ে। ভোকাল কর্ড বা স্বরযন্ত্রে প্রদাহ, নডিউল, পলিপ হলে কাশির সঙ্গে গলার স্বর বসে যায়। এছাড়া ফুসফুসে ইনফেকশন, যক্ষ্মা ও সিওপিডি নামক রোগে কাশি থাকে। অনেকেই কাশির সিরাপ খেয়ে থাকেন। এটি ইরিটেশন বা শ্বাসনালির উত্তেজনা প্রশমিত করে রাখে, রোগীকে সাময়িক আরাম দেয় কিন্তু কাশির প্রকৃত কারণ নির্মূলে সাহায্য করে না।

* নাক কান গলার রোগের সঙ্গে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

** অবশ্যই আছে। নাক থেকে শুরু করে ফুসফুস পর্যন্তকে যদি আমরা একটি ঘর ধরি তাহলে নাক হল এ ঘরের দরজা। নাক যদি কোনো কারণে বন্ধ থাকে তাহলে পুরো ঘর স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায় এবং অক্সিজেন, বাতাস ঘরে ঢুকে না। এর ফলে নাকের চারপাশে অবস্থিত সাইনাস বা বায়ু কুঠুরী, ফারিংস বা গলবিল, স্বরযন্ত্র, ব্রংকাস ও ফুসফুস-সব জায়গা আক্রান্ত হয়। এর ফলেই বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি, অ্যাজমায় রোগীরা আক্রান্ত হয়। নাক দিয়ে অ্যাসপা জিলাস নামক ছত্রাকও শ্বাসনালিকে আক্রমণ করে কাশি ও শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে।

* অফিসের পরিবেশ কেমন হলে অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকা যায়?

** অফিসে যেন ক্রস ভেন্টিলেশন থাকে অর্থাৎ আলো-বাতাস একদিক দিয়ে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বেরোতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বদ্ধ পরিবেশের অফিসে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ সৃষ্টি হয় ও এ থেকে ঘামের সৃষ্টি হয়। ফলে অফিস কর্মীরা নানা ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন। অফিসের কাগজে জমে থাকা ধুলাবালি নাকে অ্যালার্জির কারণ। যদি এসির ফিল্টার নিয়মিত বিরতিতে পরিষ্কার করা না হয় তা থেকেও নাকে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অফিসের কোনো একটি তোয়ালে অনেক দিন ধরে পরে আছে, ধোয়া হচ্ছে না তাও অ্যালার্জির কারণ। শুধু অফিসের রুম নয়, অফিসের চারপাশের পরিবেশ এবং যে লিফট বা সিঁড়ি দিয়ে অফিসে ঢোকা হচ্ছে এমনকি দেয়াল, ফ্লোর ও ছাদও সোয়াব বা পরিষ্কার করে এন্টিসেপটিক দিতে হবে।

* শীতে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ কী?

** ঠান্ডায় পরিবেশ শুষ্ক হয়ে যায়, আর্দ্রতা কমে যায় ফলে নাকের ভেতরের পাতলা ঝিল্লি বা মিউকাস মেমব্রেনও শুষ্ক হয়ে ইরিটেশন হয়। এ অবস্থায় নখ দিয়ে নাক চুলকালে রক্তপাত হতে পারে। নাকের ভেতর ভেসলিন বা ময়েশ্চারাইজার বা নরমাল স্যালাইনের ওয়াশ দিতে হয়।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. ফাহিম আহমেদ রুপম

114 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন