আপডেট: জুন ১১, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার ঃঃ ঘুষের কারখানা হিজলা থানা। ঘুসের ১৫ লাখ টাকা না পেয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় জেলহাজতে পাঠিয়েছে বরিশালের হিজলা থানা পুলিশ। ঈদুল আজহার একদিন আগে গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে গিয়েছিলেন সরোয়ার তালুকদার নামের ওই ব্যবসায়ী। মামলার বাদী সগীর সিকদার জানান, সরোয়ার তালুকদারকে চেনেন না তিনি।
এর আগে হুমায়ুন কবির নামে এক সংবাদকর্মীকেও একই মামলায় গ্রেফতার করেছিল, গ্রেফতার হয়েছিল আলাউদ্দিন দফাদার, ধুলখালা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল ঢালী। জামাল ঢালী এবং আলাউদ্দিন দফাদার আওয়ামী লীগের সরাসরি কর্মী ছিলেন। তবে সরোয়ারের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা ছিল মার মুখি। দর কষাকশি শেষে মামলায় জড়িয়ে দিল হিজলা থানা পুলিশের এস আই আরাফাত ।
তখনো তাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন বাদী। ঘুস দাবির অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করেননি হিজলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সরোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি তার।
শুক্রবার ৬ জুন ভোররাতে সরোয়ার তালুকদারের গ্রামের বাড়িতে হানা দেন পুলিশের এসআই আরাফাত। তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি। অথচ তার বিরুদ্ধে হিজলা তো দূরের কথা, দেশের কোনো থানায় কোনো মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই। গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে একটি ভিডিও দেখান আরাফাত। সেখানে আওয়ামী লীগের দোসরসহ নানা অপকর্মে জড়িত বলে দেখানো হয়েছে তাকে।
সরোয়ারের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধে ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ সোহাগের সঙ্গে মামলা রয়েছে আমার। ওই মামলায় মেজোভাই সরোয়ার ১নং সাক্ষী। আমার পক্ষ নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সোহাগ মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই ভিডিও বানায়। ভাইকে গ্রেফতার না করার অনুরোধ জানালে ১৫ লাখ টাকা চান আরাফাত। দিতে না পারায় ধরে নিয়ে যায় সরোয়ারকে। পরে ২০২৪ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পাঠানো হয় জেলে। যে মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সেখানে আসামির তালিকায় নাম নেই তার ।
ঘুস না পেয়ে ব্যবসায়ীকে চালান দেওয়ার ঘটনাস্থলও অন্য ইউনিয়নে।’
সরোয়ারের স্ত্রী তানিয়া আকতার বলেন, ‘প্রথমে ১ লাখ টাকা চান দারোগা আরাফাত। পরে বেশ কয়েকবার থানার ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে দফায় দফায় বাড়াতে থাকেন ঘুসের অঙ্ক। একপর্যায়ে ২০ লাখ টাকা চান তিনি। ঈদের বন্ধের মধ্যে এত টাকা কোথায় পাব বললে শেষ পর্যন্ত ১৫ লাখ না দিলে কোনোভাবেই আমার স্বামীকে ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন। ঘুস দাবির এই পুরো ঘটনা ঘটে আমাদের দুই পরিবারের সব সদস্যের সামনে। টাকার অঙ্ক চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিবারই মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন দারোগা আরাফাত। এ ধরনের একটি ভিডিও রেকর্ডিং বিজয় নিউজের হাতে।
যে মামলায় সরোয়ারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সেটি গত বছরের ৯ অক্টোবর হিজলা থানায় দায়ের করেন ধুলখোলা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মোহাম্মদ সগির হোসেন। ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করে দায়ের হওয়া ওই মামলায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়। আসামিদের প্রায় সবাই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। মামলার বাদী সগীর আহম্মেদ বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া সরোয়ার তালুকদারকে আমি চিনি না, দেখিওনি কোনোদিন। তাকে কেন এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে সেটা পুলিশ ভালো বলতে পারবে।
হিজলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন এসআই আরাফাত। প্রাথমিকভাবে জেনেছি তিনি আওয়ামী লীগ করেন। ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা সরোয়ার সম্পর্কে জানতে সেখানকার থানায় মেসেজ দেওয়া হলে
তারাও একই তথ্য দেন। তিনি ওই এলাকার সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনের ঘনিষ্ঠ। এছাড়া তাকে সগীর হোসেনের মামলায় সন্দিগ্ধ মনে হওয়ায় গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেওয়া হয়। ১৫ লাখ টাকা ঘুস দাবির অভিযোগ সত্য নয়।’ হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি, সরোয়ার ১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৯নং ইউনিটের সভাপতি। ৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে ভূমিকা পালন করেছেন। এসব তথ্য হিজলা থানা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।’
ওসি সাইফুলের এই বক্তব্যের অবশ্য কোনো সত্যতা মেলেনি। ৯নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন মো. সিরাজ এবং সাধারণ সম্পাদক জনি মিয়া। এর আগে ২০০৯ সালে গঠিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে মাহবুব হাওলাদার এবং কালাম শেখ।
বর্তমানে বরিশাল কারাগারে থাকা সরোয়ার তালুকদারের আইনজীবী মহসীন মন্টু জানান, ‘ঈদের ছুটির মধ্যে ঘটেছে গ্রেফতারের এই ঘটনা। মামলার নথি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে থাকায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। তবে থানা থেকে যে বিবরণ দিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে সেখানেই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট। আদালত খোলার পর আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থায় যাব।’ বরিশালের পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘যতদূর জানি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘুস দাবির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তারপরও অভিযোগ যখন উঠেছে আমরা তদন্ত করে দেখব। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’