আপডেট: জুন ২৩, ২০২৫
এসএন পলাশ,বিশেষ সংবাদদাতাঃঃ মাদককাণ্ডে বিভাগীয় মামলা মাথায় নিয়েও নিয়ম অমান্য করে ১৩ বছর ধরে বরিশাল নগর পুলিশের দায়িত্ব পালন করা দুর্নীতিবাজ বিতর্কিত এএসআই আউয়াল এবার কাউনিয়া থানায় যোগদান করেছেন। বদলীযোগ্য চাকরী হলেও দীর্ঘ বছর একই নগরীতে দায়িত্ব পালনের সুযোগে বরিশালে সিন্ডিকেট তৈরি করে মাদক বিক্রিসহ ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ টাকা আয়ের অভিযোগ উঠেছে। কনেস্টবল থেকে এএসআই হওয়া এ কর্মকর্তা ইতিমধ্যে বরিশাল নগরীর ব্যয়বহুল একাধিক এলাকায় নিজ ও স্ত্রীর নামে কিনেছে জমির প্লট। প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তার অবৈধ বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে গত ১৩ বছর তিনি বরিশাল নগর পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেছেন। তাই অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন নগরবাসী।
বিভিন্ন অভিযোগ সূত্র ও পুলিশ দপ্তরের তথ্যমতে, গত একমাস আগে বরিশাল নগর গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত থাকাকালীন এএসআই আউয়াল তার নির্ধারিত এলাকার বাইরে গৌরনদী উপজেলায় গিয়ে মাদকসহ এক নারীকে আটক করে। এরপর সেই নারীর কাছ থেকে ঘুষগ্রহণের অভিযোগ ওঠে আউয়ালের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় পুলিশ কমিশনার বরাবর গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর ছগির হোসেন আউয়ালের বিরুদ্দে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত শেষে সত্যতা পাওয়ায় আউয়ালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলা এখনও চলমান রয়েছে। কিন্তু সেই মামলা মাথায় নিয়ে দায়েরের এক মাস পর কয়েকদিন আগে কাউনিয়া থানায় যোগদান করেন এএসআই আউয়াল। বিভাগীয় মামলা চলমান থাকার পরেও কাউনিয়া থানায় যোগদানের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাসহ সচেতন মহলের মাঝে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে একই স্থানে দায়িত্ব পালনের কারণে এএসআই আউয়াল ও তার স্ত্রীর নামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের নবগ্রাম রোডের নলিদাসের পোল ও রুইয়ার পোল এবং নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিনস্থানে কিনেছেন জমি। এছাড়াও গ্রামের বাড়ি বরগুনায় নিজ ও নিজের স্ত্রীর নামে সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এএসআই আউয়াল বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার করে নাম মাত্র মাদক দিয়ে আসামি চালান করে বাকি মাদক বিভিন্ন মাদক বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। ডিউটি সময় ছাড়াও সে বিভিন্ন মাদকের স্পটে গিয়ে তোলা বানিজ্য করেন এএসআই আউয়াল।
কাউনিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা মনির বলেন, দুর্নীতিবাজ এ পুলিশ কর্মকর্তাকে কাউনিয়া থানায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখবর শুনে আমরা আনন্দিত নই। কারণ অসৎ মানুষ জনগণের বন্ধ না শত্রু হিসাবে কাজ করে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল জেলার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্যদের জন্য পুলিশ বাহিনীর বদনাম হচ্ছে। তাই পুলিশের মান রক্ষায় এমন কর্মকর্তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এএসআই আউয়াল বলেন, গৌরনদীতে মাদক উদ্ধারের যে অভিযোগ করা হয়েছিল সেটার তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। আর সম্পদের বিষয়ে আউয়াল বলেন, একটি জমি আমার শ্বশুর আমাকে দিয়েছে। এছাড়া বাকি সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি আউয়ালের।
এদিকে আউয়ালের বক্তব্য মিথ্যা বলে জানিয়েছেন বরিশাল নগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গৌরনদী উপজেলায় গিয়ে মাদকসহ এক নারীকে আটকের ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আউয়ালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। সেই মামলা এখনও চলমান। আউয়ালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকাকালীন কিভাবে কাউনিয়া থানায় যোগদান করেন তার কোনো জবাব দেয়নি এই কর্মকর্তা।