২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশাল হিজলায় বর্ষার শুরুতেই বসত ঘর বাড়ির হারা অর্ধশত পরিবার

আপডেট: জুলাই ৫, ২০২০

হিজলা উপজেলার সাথে বাউশিয়ায় এভাবেই প্রতিদিন স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে একেরপর এক বসত ঘর বাড়ি              ছবি- বিজয় নিউজ

সাইফুল ইসলাম:;  জুলাইয়ের শুরুতেই বর্ষামৌসুমে বরিশালের হিজলা উপজেলার বাউশিয়া গ্রামের অর্ধশত পরিবার গৃহহীন। নদী শাসনের গুরুত্ব নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের।


হিজলা উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম উত্তর বাউশিয়া, বাহেরচর এবং দক্ষিণ বাউশিয়া। রাক্ষুসী মেঘনা এবং তিনটি গ্রাম, এরা পরস্পর লড়াই করছে দীর্ঘবছর ধরে। রাক্ষুসী মেঘনার সাথে লড়াই করে পরাজিত গ্রাম তিনটি। এখন গ্রাম নেই, আছে নাম। তারপরেও নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে সরকারি বেশ কিছু বিদ্যালয়, মসজিদসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা-জমি।
রফিক খান, আলী আকবর শিকদার, মোস্তফা খান, কাইয়ুম খান, ইউপি সদস্য জন্টু হাওলাদার জানান, “২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন দক্ষিণ বাউশিয়া ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মাত্র ১১ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয় এখানে। ঐগুলো এখন পানির নিচে। জানা গেছে, হিজলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা নদী বাঁধ দেয়ার জন্য বরাদ্দ প্রদান করে। আমরা ১১ হাজার বস্তার কথাই জানি।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমীনুল ইসলাম জানান, যে সকল মানুষগুলো গৃহহারা হয়েছে, যাদের ভিটেমাটি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, তাদের তালিকা প্র¯‘তের জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মানের কাজ করবে। বিষয়টি তাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলাপ হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন প্রতিবেদককে ফোনে জানান, হিজলা উপজেলাকে ভাঙন থেকে রক্ষ করার জন্য ৫শ’কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আপদকালীন ২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকার কাজের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। অনুমোদ পাওয়া গেলে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু করা হবে।
মাত্র ক’দিনের পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম বাউশিয়ার অধিকাংশ ঘরবাড়ি, সুপারিবাগান, ফসলি জমি, বৈদ্যুতিক খুঁটি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। দিনরাত কাজ করছেন পল্লী বিদ্যুতের লোকজন। হিজলা উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি মোঃ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, “বিগত বছর নদী ভাঙনের কারণে একটি লাইন নতুন করতে হয়েছে। এ বছর আবার নদী ভাঙ্গনের কারণে ঐ লাইন তুলে ফেলতে হয়েছে। নদী বাঁধে গতি না এলে এ বছরই গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন হবে।”
ইতোমধ্যে উদ্ধার হয়েছেন শহিদ বেপারী, কাজল হাং, ফরিদ শিকদার, পরান বেপারী, ফারুক বেপারী, কদম আলী খান, মিলন খান, কুদ্দুছ বেপারী, শাহজাহান খানসহ অর্ধশত পরিবার। চোখের জলে কাঁদলেন শতবছরের পুরোনো বাড়ির মালিক কাইয়ুম খান। চোখ মুছতে মুছতে এই প্রতিবেদককে বললেন,“ আজ নদীরক্ষার ধীরগতির কারণে আমার শত বছরের স্মৃতি মুছে গেল। রাক্ষুসী মেঘনা তাড়িয়ে দিল ছেলে সন্তান, পরিবারসহ বাউশিয়া গ্রাম থেকে। আজ আমি নিঃস্ব হলাম।” কাইয়ুম খানের মতো একই অবস্থা এখানকার উদ্বা¯‘দের।

 

 

189 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন