৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

বরিশালে বিজয় বাবুর পানির ব্যবসার কাছে অসহায় নগরবাসী,

আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার ঃঃ বরিশালে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে বাজারজাত করায় অমৃত গ্রুপের বিরুদ্ধে বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাসিন্দা ও আইনজীবী এম. মাসুদ হাওলাদার এ আবেদন করেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে , অমৃত গ্রুপ অব কোম্পানি বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে নদী বা সমুদ্রের পানি রিফাইন না করে ভূগর্ভস্থ পানীয় জল অবৈধভাবে উত্তোলন করে বরিশাল সহ দেশের সর্বত্র বাজারজাত করছে। যার ফলে পার্শ্ববর্তী হিজলা, ছাতিয়া, রহমতপুর, মেথিয়া, চাঁদপাশা, ক্যাডেট কলেজ, মাধবপাশা, পাংশা, গড়িয়ার পাড় সহ আশেপাশের এলাকার তীব্র পানীয়জলের সংকট দেখা দিয়েছে। গভীর নলকূপে প্রায় সময়েই পানি থাকে না, মাঝে মাঝে ভোর রাতে দিকে কিছুটা পানি পাওয়া যায়।

অমৃত লাল দে কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট ফ্যাক্টরির ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার জয় দে বলেন, “বর্তমানে আমাদের ফ্যাক্টরির আশেপাশে জনবসতির ঘনত্ব অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিবছর এই সময়টাতে এ অঞ্চলের টিউবওয়েলগুলোতে পানি তুলনামূলকভাবে কম উঠে। অন্যদিকে, আশপাশের অধিকাংশ পুকুর, ডোবা ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এর অন্যতম কারণ।”

তিনি আরও বলেন, “এলাকার অনেকেই অনেক আগেই গভীর নলকূপ (ডিপ টিউবওয়েল) বসিয়েছেন, যার গভীরতা ৬০০ থেকে ৮০০ ফুট পর্যন্ত। তাই এসব নলকূপে এখন পানি কম ওঠা স্বাভাবিক। আমরা ফ্যাক্টরিতে একটি ২ এইচপি পাম্প ও ২ ইঞ্চি পাইপ ব্যবহার করে ১০৪০ ফুট গভীরতা থেকে পানি উত্তোলন করি। প্রতিদিন ১১ থেকে ১৪ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা হয়, যা একটি সাধারণ পরিবারের ব্যবহারের সমপরিমাণ।” জয় দে দাবি করেন, “আমাদের পানি ব্যবহারের পরিমাণ এলাকায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। বরং আমরা যতটুকু পানি উত্তোলন করি, তা খুবই সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত।

সরেজমিনে জানা গেছে, প্যাকেজজাত পানির প্রস্তুতকারক ‘যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি. নামক প্রতিষ্ঠানটির কারণে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার অনেক বসতবাড়ির টিউবওয়েল ও মর্টার লাইনে প্রায় এক বছর ধরে পানি উঠছেনা। রাত গভীর হলে কিছু পানি উত্তোলন করা সম্ভব হয়। সুপেয় পানির তীব্র সংকটের দুর্ভোগে পড়েছে শত শত পরিবার।

একাধিক বাসিন্দা বলেন- শুষ্ক মৌসুমের সময় বরিশাল সহ দেশের সকল স্থানে ভূগর্ভস্থের সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়। এই সময়ে ভূগর্ভস্থের পানি উঠিয়ে বাজারজাত করলে সংকট আরো বাড়বে এটা স্বাভাবিক। অথচ ৫ কিলোমিটার দূরে নদী থাকলেও সেখান থেকে পানি উত্তোলন ও রিফাই করে বাজারজাত করলে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

মাধবপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফাতেমা আক্তার লিপি বলেন, এক বছর আগে এ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির কোন সমস্যা ছিল না।

কলস গ্রামের বাসিন্দা কাজী মিজান জানান, আমরা অমৃত লাল দে প্রতিষ্ঠানটির কারণে গত এক বছর ধরে গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে অমৃত নামে মিনারেল ওয়াটার বিক্রি করছে। এতে মাধবপাশা ও রহমতপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা নিয়মিত পানি উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়গুলো মনিটার করি। এই অভিযোগের বিষয়েও দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল অমৃত গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভূগর্ভস্থ পানি সংকট সৃষ্টির অভিযোগ এনে সামাজিক মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট করেন শাহরিয়ার অনিক নামের এক যুবক। আর মুহূর্তের মধ্যেই ফেসবুকের সেই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়লে এর সাথে সহমতও প্রকাশ করেন অনেকে। শাহরিয়ার অনিক তার ফেসবুক আইডিতে ‘অমৃত পানি’ এর একটি বোতল হাতে ছবি পোস্ট করে লিখেন- Save Water, Save Us. We are in a big Danger. আজকে ৭৮ মিনিট টানা মটর চালিয়ে ৫০০ লিটার পানি তুলতে পারিনি।

এভাবে চলতে থাকলে- ‘অমৃত’ কারখানার কারণে শিগগিরই ভয়াবহ পানিশূন্যতায় পড়বো।” তার এই ফেসবুক পোস্টটি শেয়ার করে অনেকে Save Water Save Us হ্যাশট্যাগে বহু মানুষ সংহতি প্রকাশ করেন।

154 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন