৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

লন্ডনে চার সন্তান থাকা মা জননীর ঠাই হলো ঢাকার বৃদ্ধাশ্রমে -দুই চোখে শুধু জল আর জল

আপডেট: আগস্ট ৪, ২০১৯

সালেমা আমজাদ

মোঃ মারুফ হাওলাদার।।

নাম তার সালেমা আমজাদ জন্মও লন্ডনে। তার শৈশব-কৈশোর- পড়াশোনা আর বেড়ে উঠা সবই ওই শহরে।বতমানে তার বয়স ৭৫ বছরে ছুই ছুই এবং তারুণ্যের দিনগুলোও কেটেছে যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে । ১৯ বছরে বিয়ে, চার সন্তানের জননী সালেমা আমজাদ ওই লন্ডনে। জীবনের দীর্ঘ ৫৫ বছর সময় স্বামী ঘরে আর সে ঘরে চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দময় জীবন কাটিয়েছেন তিনি। কি বিদায়তার খেলা জীবন শেষ দিকে পৌছে সালেমা আমজাদের ঠিকানা হয়েছে বাংলাদেশের রাজধানীর বৃদ্ধাশ্রমে।

ঢাকার কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারে ২৮ মাস বছর ধরে আছেন সালেমা আমাজাদ।আর সেখানেই ফেলে আসা সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দময় দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করে কাটাচ্ছেন দিনরাত । কি আদরের মহবতের সন্তান আশ্রয় নেওয়া জননীর কেউ একবারের জন্যও তাকে দেখতে আসেননি সন্তানরা । জননীর এই চার সন্তানকে বড় করে তুলতে নিজের জীবনটাই উৎসর্গ করেছিলেন ।

এমন সময় তার এসেছিল সম্মানজনক বেতনের চাকরি।সন্তানদের মানুষ করার দেখভাল করতে তিনি এমন চাকরী হাত ছাড়া করতে দিধাবোদ করেনি এই জননী ।সাড়া জীবনটা সময়টায় জননী সন্তানদের দিয়েছেন। সন্তানরা ক্রমে বড় হয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে একপর্যায়ে খুব ভালো ভালো কাজের সুযোগ পান। চাকরিবাকরি, সংসার, সন্তানসহ নিজেদের মতো গুছিয়ে ফেলেন যার যার জীবন।শেষ মুহুত তাদের কারো পরিবারেই জায়গা হয়নি বয়স্ক এই জননী ।সন্তানদের কাছে একমুটো খাবার আর আশ্রায় নিয়ে শেষ জীবনটা আল্লাহ র পথে কাটিয়ে দেয়া তার শেষ ইচ্ছে পুরোন হলোতো নাই হলে আশ্ররায় কেন্দ্র।
একপর্যায়ে ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে লন্ডনের উন্নত জীবন ছেড়ে শূন্যহাতে চলে আসেন বাংলাদেশে বাবার জন্মভিটা খুলনায়। সেখানেও খুঁজে পাননি কোনো স্বজন। শেষমেশ ফরিদপুরের এক সাংবাদিকের সহায়তায় ঠাঁই হয় রাজধানীর কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারে। ২৮ মাস ধরে সেখানেই কাটছে তাঁর দিন।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারে গিয়ে এ রকম অর্ধশতাধিক বৃদ্ধ মা-বাবার খোঁজ মেলে। তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন সময় রাষ্ট্র ও সমাজের নানান গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেখা মিলল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরও। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার এক স্ত্রীকে দেখা গেল বিছানায় শুয়ে কাঁদছেন আর চোখের পানি মুছছেন। জীবনের সবকিছু উজাড় করে তারা একদিন নিজেদের সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, আর আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে উপেক্ষিত তাদের আশ্রয় হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে।
কল্যাণপুরের খান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে বৃদ্ধাশ্রমটির গেট গলে ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, টেবিলে বসে আনমনে কাজ করছেন মাঝ বয়সী এক লোক। তিনি মিল্টন সমাদ্দার, এ বৃদ্ধাশ্রমের চেয়ারম্যান। নিজের উদ্যোগেই গড়ে তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটি। তাঁর সঙ্গে কথা শুরু করার কিছুক্ষণ পরই সেখানে হাজির হন সালেমা আমজাদ।

মিল্টন সমাদ্দারের কাছে সালেমার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ‘তিনি আমার মা। এ বৃদ্ধাশ্রমেরই বাসিন্দা। ওনার মতো আমার আরো ৫৬ জন মা-বাবা এখানে রয়েছেন। কিছু জানতে চাইলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেই জেনে নিন।’ এখানে কেমন আছেন জানতে চাইলে সালেমা বলেন, বেশ ভালোই আছি। ছেলের কাছে থাকলে মা কখনো খারাপ থাকে না। আমিও খারাপ নেই। বৃদ্ধাশ্রমের উদ্যোক্তা মিল্টনকে এভাবেই ছেলে বলে সম্বোধন করেন সালেমা। নিজের পরিবার, সংসার আজ তাঁর কাছে সুদূর অতীত। এ প্রতিষ্ঠানটিই এখন হয়ে উঠেছে তাঁর একমাত্র আপন।

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছুই বলতে রাজি হননি সালেমা আমজাদ। কেবল বলেছেন, লন্ডন শহরে আমার জন্ম। সেখানেই পড়ালেখা করেছি। বিয়ে হয়েছে সে শহরেই। আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে। তাঁদেরও বিয়ে হয়েছে, প্রত্যেকের ঘরে সন্তান-সন্ততি আছে। কিন্তু তাঁদের কারো ঘরে আমার জায়গা হয়নি। তাঁরা যার যার মতো করে চলে গেছে। এক পর্যায়ে আমি সরকারের আশ্রয়ে চলে যাই। সে সহায়তা নিয়েই আমি চলতাম। পরবর্তীতে চলে আসি বাবার দেশে।

সন্তানদের কথা মনে পড়ে কি না জানতে চাইলে ভাগ্যাহত এই মা বলেন, আমি জানি তাঁদের কথা মনে মনে করতে চাই না। কিন্তু মনে না করে কি কোনো পা থাকতে পারে। চোখ মুছে আর কোনো কথা বলতেই রাজি হলেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মিল্টন সমাদ্দারই বলেছেন, লন্ডনের উন্নত জীবন ত্যাগ করে কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারে পরে থাকা এই মায়ের জীবন বিড়ম্বনার গল্প।

126 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন