আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯
আপডেট:
বিজয় নিউজঃ জাতীয় ক্যান্সার ও গবেষণা ইন্সটিটিউট ছাড়াও দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ রয়েছে।
এর মধ্যে তালিকায় রয়েছে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকল হাসপাতালে রেডিওথেরাপিস্ট থাকলে বছরের পর বছর ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় দেয়া হয় না। সরকার তাদেরকে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন দিয়ে যাচ্ছে। এবং কোটি কোটি টাকার মেশিনারী অযত্নে পরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কতিৃপক্ষ দেখে না দেখার বান করে চলে। যার ফলে দক্ষিন অঞ্জলের হাজার হাজার রোগিরা রেডিওথেরাপিস্ট নিতে পারচ্ছে না। এ বিষয় সেবাচিম হাসপাতালে এক ডাঃ নাম না প্রকাশ শর্তে তিনি বলেন-সেবাচিমে রেডিওথেরাপিস্ট মেশিন রয়েছে । কিন্তু ব্যবহার করা হয় না কতিৃপক্ষের গাফলিতে রোগিরা এই সেবা থেকে বঞ্জিত রয়েছে।
এছাড়া দেশের ৮ বিভাগে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট আরও ৮টি নতুন ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানেও থাকবে রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ। যেখানে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের শরীরে রেডিওথেরাপি দেয়া হবে। এতগুলো প্রতিষ্ঠান থাকার পরও রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত নিয়োগ বিধিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডওথেরাপি) পদটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত নিয়োগ বিধিতে এ পদটি না থাকায় ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট’ এর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করা হয়; যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নিয়োগ বিধিতে এ পদটি অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেন; কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি।
এর আগে সোসাইটির পক্ষ থেকে নিয়োগ বিধিতে পদটি অন্তর্ভুক্ত করতে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সমীর কান্তি সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন জানান; তবে সেটিও আমলে নেয়া হয়নি।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে সরকারি ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিগুলোতে (আইএইচটি) ‘মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওথেরাপি)’ বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। তিন বছর মেয়াদি এই কোর্সে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর ও ঝিনাইদহ আইএইচটিতে ২০ জন করে মোট ১৪০ জন ভর্তি করা হয়। কোর্স শেষে এসব শিক্ষার্থীর এক বছরের ইন্টার্নশিপ করতে হয়। অথচ বিষয়ভিত্তিক পদগুলোতেও নিয়োগ পাচ্ছেন না রেডিওথেরাপিস্টরা।
সম্প্রতি গজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৮ আগস্ট প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রণীত নিয়োগ বিধিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডওথেরাপি) পদ নেই। অথচ ওই হাসপাতালে এ সংক্রান্ত তিনটি শূন্য পদ রয়েছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯৮৫ সালে ও ২০১৮ সালে দুটি নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করে। কিন্তু কোনো নিয়োগ বিধিতেই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওথেরাপিস্ট) পদটি অন্তর্ভুক্ত করা করা হয়নি। ফলে এ পদে নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নতুন কিছু নয়। এরপরও নিয়োগবিধি ছাড়াই ১৯৮৫, ২০০৮ ও ২০১১ সালে বিভিন্ন হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগে রেডিওথেরাপিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
১৯৮৫ সালে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। ফলে ওই সব পদ খালি রয়েছে। এছাড়া ক্যান্সার হাসপাতালসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিওথেরাপিস্টের অনেক পদ খালি থাকলেও সেগুলোতে পদায়নের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানেই রেডিওথেরাপি মেশিন থাকলেও থেরাপিস্ট না থাকায় সেগুলো অবহেলায় পড়ে আছে। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে রেডিওগ্রাফার দিয়ে রেডিওথেরাপিস্টের কাজ করানোর ঘটনা ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট’র সভাপতি মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট ছাড়া সঠিকভবে রেডিওথেরাপি দেয়া অসম্ভব। অনেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগে এক বা একাধিক মেশিন পড়ে আছে। যেগুলো ব্যবহার করার লোক নেই। এতে ক্যান্সার আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারপরও নিয়োগ বিধিতে এই পদটি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। এছাড়া ৮টি বিভাগে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট আরও ৮টি ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। সেখানেও অনেক লোক প্রয়োজন।
তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত নিষ্পতি করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রেডিওথেরাপিস্টের পদটি নিয়োগ বিধিতে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও সমস্যা নেই। প্রয়োজনে নতুন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করে এ পদে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হবে।