আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
বিজয় নিউজ:: দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের সংবিধানে জুয়া বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আর নতুন কোনো আইন হয়নি। ফলে এখনও কার্যকর রয়ে গেছে দেড়শ বছরের বেশি পুরনো আইনটি।
বর্তমান সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’ এছাড়া ‘পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭’ এর ৩, ৪ ও ১৩ ধারা অনুসারে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স বা পারমিট নিয়ে মদ বিক্রি ও পানের সুযোগ আছে।
সম্প্রতি ঢাকায় র্যাবের সমন্বিত অভিযানে চারটি কথিত ক্যাসিনো সিলগালা ও অনেককে আটকের পর জুয়া খেলা ও ক্যাসিনো নিয়ে এখন বাংলাদেশে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বরাতে জানা যাচ্ছে, ঢাকায় অন্তত ৬০টি এমন ক্যাসিনোর অস্তিত্ব রয়েছে।
পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের আশপাশের দেশ সিঙ্গাপুর, ম্যাকাও, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এমনকি নেপালেও জুয়া খেলার জায়গা হিসেবে ক্যাসিনোর জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্লাবে বা আড্ডায় গোপনে জুয়া খেলার অনেক আসর বসার কথা নানা সময়ে শোনা গেলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণসজ্জিত এ ক্যাসিনোগুলোর অস্তিত্ব থাকার খবর বাংলাদেশের মানুষের কাছে একেবারেই নতুন। অথচ মদ বিক্রি বা পানের মতো ক্যাসিনোর অনুমোদন বা লাইসেন্স দেয়ার কোনো ব্যবস্থা বা সুযোগই বাংলাদেশের কোনো আইনে নেই। জুয়ার বিষয়ে যে আইনটি কার্যকর আছে সেটি হলো ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন ১৮৬৭’, সেখানে অবশ্য ‘ক্যাসিনো’ বিষয়ে কিছু বলা নেই।
তবে ওই আইনে ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে বা স্বেচ্ছায় অন্য লোককে, ওই স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে দিলে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি তাস, পাশা, কাউন্টার অর্থ বা অন্য যেকোনো সরঞ্জামসহ যেকোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলেও শাস্তি দেয়ার সুযোগ আছে এ আইনে।
সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বহিষ্কার হওয়া খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম গ্রেফতার হন। তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। দেশের প্রচলিত জুয়া আইনে শাস্তির বিধান কী- তা নিয়েও চলছে আলোচনা। যদিও জুয়া নিয়ে শাস্তির বিধান থাকলেও তা কোনো শাস্তির পর্যায়ে পড়ে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ক্যাসিনো খেলা নিয়ে সত্যিকার অর্থে শাস্তি দেয়ার মতো কোনো আইন নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় সংবিধানে জুয়া অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই সেটি চলতে পারে না। আইনজ্ঞরা বলছেন, জুয়া ও ক্যাসিনো নিয়ে নতুন করে আইন তৈরি করা দরকার।