২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

পেঁয়াজ সংকটের পকেট ভারি করছে মুনাফাভোগীরা

আপডেট: নভেম্বর ১, ২০১৯

বিজয় নিউজ:;  দেড় মাস ধরে দেশের বাজারে ‘পেঁয়াজ সংকটের’ অজুহাতে মুনাফাভোগীরা তাদের পকেট ভারি করছে। দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও সন্তোষজনক আমদানি পরিস্থিতির পরও ভারতের রফতানি বন্ধে সংকট তৈরি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আর এ সংকটের কথা বলেই আমদানিকারকরা দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিশীল করে রেখেছেন।

ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজের চালান দেশের বাজারে নিয়মিত ঢুকছে। কিন্তু আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ সীমান্ত পার করে দেশে এনেই এলসি মূল্যের দ্বিগুণ দামে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছে। পাইকাররা আবার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এক ধাপ বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।

ফলে বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে আসতে পণ্যটির দাম আরও এক ধাপ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে একশ্রেণির মুনাফাভোগী ক্রেতাদের পকেট কাটছে। পেঁয়াজ কিনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা।

রাজধানীর শ্যামবাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাজারে মিসরের পেঁয়াজের আমদানিমূল্য কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকা। কিন্তু সংকটের কথা বলে আমদানিকারকরা কমিশনভোগী বিক্রেতাদের মাধ্যমে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে কেজিতে ৫৫ টাকা লাভ করছেন। তারা দাম নিচ্ছেন ৯৫ টাকা। পাইকারি বিক্রেতারা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ১০০-১০৫ টাকা কেজি। খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভোক্তারা কিনছেন ১৩০ টাকায়।

প্রতি কেজি মিয়ানমানের পেঁয়াজের এলসি মূল্য ৬৮ টাকা। পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ টাকা। পাইকারি বিক্রেতারা এই পেঁয়াজ খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে ১২০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করছে ১৩০ টাকা কেজি দরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আগে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিমূল্য ছিল প্রতি কেজি ৭৫ টাকা। আমদানিকারকরা কমিশন বিক্রেতাদের মাধ্যমে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা লাভে বিক্রি করছে ১২৫ টাকা। পাইকারি বিক্রেতারা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে ১৩৪-১৩৫ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করছে ১৪০ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে- মিসর, মিয়ানমার কিংবা ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ সীমান্ত পেরিয়ে দেশে আসার সময়ই দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. আমানত আলী বলেন, আমরা কমিশনে বিক্রি করি। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আমদানিকারকরা। তারা যে রেট (দর) দেয় সেই দামে আমাদের বিক্রি করতে হয়। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আমদানিকারকদের প্রতি নজর দিতে হবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার কৃষক পর্যায় থেকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু মোকাম মালিকরা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে এ পেঁয়াজ বিক্রি করছে ১২৫ টাকা। পাইকাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে ১৩৫ টাকা। আর খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তার কাছে বিক্রি করছে ১৪০ টাকা কেজি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ৪১নং আড়তের ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন বলেন, আমরা বাড়তি দরে কিনে ৫-১০ টাকা খরচ রেখে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেই। যা দাম বাড়ানোর আমদানিকারকরাই বাড়িয়েছে। সংকটের কথা বলে যে যেভাবে পারছে লাভ রেখে বিক্রি করছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু যে আমদানিকারকদের দোষ সেটাও না। পাইকারি ও খুচরা দরে দেখা যাবে, বিক্রেতারা সুযোগ বুঝে কেনা দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে।

কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, সবাই বলছে পেঁয়াজের সংকট। কিন্তু কোথায় সংকট তা দেখছি না। সংকটের কথা সবাই বলছে, আমিও বলছি। দামও বাড়তি নিচ্ছি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দাম বাড়তি হলেও ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ পাচ্ছেন।

96 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন