২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ধর্মপাশা ও মধ্যনগর হাওরে কারেন্ট ও মশারি (খনা)জালদিয়ে নিধন করছে বড় মাছের পোনা

আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২২

গিয়াস উদ্দিন রানা,ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা প্রতিনিধি(সুনামগঞ্জ):; সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় অসাধু মৎস্য শীকারিরা নিষিদ্ধ কারেন্ট জালদিয়ে নিধন করছে দেশীয় প্রজাতির বড় মাছের পোনা।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার সব গুলো জলাশয়ে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও মশারি (খনা) জাল দিয়ে অবাধে নিধন করছে। এতে দেশীয় প্রজাতির রুই, কাতলা, মৃগেল, ঘনিয়া, বাউশ, আইড় ও বোয়াল মাছের পোনা। ফলে দেশিয় মাছের বংশ ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ভরা মৌসুমে বড় মাছের আকালের আসংখ্যা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ধর্মপাশা উপজেলা ও নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুন এই দুই উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এই দুটি উপজেলার ৭৩৭টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে বিভিন্ন খাল-বিল, নদ-নদী ও হাওরে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ বন্যা দেখা দেওয়ার তিন-চার দিন পর পানি কমতে শুরু করে। এর পর থেকেই স্থানীয় অসাধু জেলেরা সরকার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, মশারি (খনা জাল) দিয়ে রাত-দিন নিধন করছে দেশীয় প্রজাতির বড় মাছের পোনা। এসব জালে আটকা পড়ছে বড় মাছের তুলনায় বড় মাছের পোনা। এসব পোনা মাছ স্থানীয় হাটবজারে অবাধে বিক্রি করছে। ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এ দুই উপজেলায় নিষিদ্ধ জেলের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৩৮ ও অনিবন্ধিত ১০ হাজারের বেশি।
মৎস্য সংরক্ষন আইন ১৯৫০-এ বলা হয়েছে, নির্বিচারে পোনা মাছ নিধন মৎস্যসম্পদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিরাট অস্তরায়। এ আইনে উল্লেখ রয়েছে, ২৩ সেন্টিমিটারের (৯ইঞ্চি) নিচে কাতলা, রুই, মৃগেল,কালবাউশ, ঘনিয়াসহ দেশিয় প্রজাতির মাছ নিধন করা যাবে না।এ ধরনের মাছ নিধন বেআইনি।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে ধর্মপাশা উপজেলা ও নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলা সদর বাজারসহ একাধিক হাটবাজারে প্রতিদিন সকাল-বিকাল এসব বড় মাছের পোনা বিক্রি করছে অবাধে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় কয়েক জন জেলে জানান, মাছ শিকার করেই তাঁদের সংসার চলে। তাই আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই জীবন বাঁচানোর তাগিদেই আমরা মা মাছের পোনা শীকার করছি।
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিন ইউপির মিলনপুর গ্রামের লক্ষন বর্মন, পাইকুরাটি ইউপির সুনইপাড়া গ্রামের রবিন্দ্র বর্মন, মধ্যনগর বাজারের বাসীন্দা খিতিশ বর্মনসহ একাধিক বর্মন (পেশাদার জেলে) সম্প্রদায়ের লোকজনের দাবি তারা বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে হাওর খাল বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। এখন ইজারাদার ৫০ একর পরিমানের জলমহাল লিজ এনে ২০০০ একর এমনকি বাড়ীর আঙ্গীনায় পর্যন্ত তাদের দখলে চলে যায়। আমাদের চলার পথ বন্ধ। ইজারাকৃত জলমহালের সীমানা নিধারন করার দাবিজানান।
বংশীকুন্ডা দক্ষিন ইউপির বংশীকুন্ডা গ্রামের সমাজ সেবক শিক্ষক সামিউল কিবরিয়া বলেন, অসহায় জেলেরা মাছ শীকার করেই তাদের সংসার চলে। সরকার যদি বর্ষা মৌসুমে তিন মাস জেলেদের জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হলেই উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশিয় প্রজাতির পোনা নিধন বন্ধ হবে।
ধর্মপাশা উপজেলা ও মধ্যনগর উপজেলার দায়ীত্বে নিয়োজিত সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সালমুন হাসান বিপ্লব বলেন, আমাকে দুটি উপজেলার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এ বছর বন্যার পানিতে ৭৩৭টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষিদের তালিকা প্রস্ততকরে উধর্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক হাওরে অভিযান চালিয়ে অগনিত কারেন্ট জাল, মশারি (খনা জাল) জব্দকরে আগুনে পুড়িয়েছি।

83 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন