আপডেট: ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
প্রতিবন্ধী রুমি বামে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রেমজিলাল দাস ডানে।
হিজলা প্রতিনিধি :: শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার শিকার। বন্ধ হয়ে গেল এসএসসি পরীক্ষার সকল প্রস্থিতি। বরিশালের হিজলা উপজেলা নিবার্হী অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেও বিচার পাচ্ছেন না প্রতিবন্ধী রুমি। উপজেলা সদর বিএল বালিকা বিদ্যালয়ের পিতৃহারা অসহায় প্রতিবন্ধী রুমি এবার এস এস সি পরীক্ষার্থী।
প্রতিবন্ধী রুমি জানান, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রেমজিলাল দাস তাকে ব্রেস্ট ক্যান্সার এর অপারেশনের যায়গায় বেত্রাঘাত করেন। এতে তিনি শুধু অসু¯’ই হননি, তার সেলাইস্থান থেকে রক্ত ঝরছিল। কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। প্রথমে অসুস্থ হয়ে হিজলা রেমিডিতে ভর্তি হন, পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে তার সাবেক ডা: ক্যান্সার ইনিস্টিটিউট ঢাকায় যোগাযোগ করেন। সেখানে আবার অপারেশন করান।
এর মাঝে স্কুল কর্তৃপক্ষ দেখতে বা খোঁজ নিতে আসে নি। অবশেষে উপায়ান্ত না পেয়ে গত ৯ ডিসেম্বর হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত অভিযোগ জানান। ১৫ ডিসেম্ব^র পর্যন্ত শিক্ষাকর্মকর্তা, শিক্ষক, ইউএনও কেউই তার খবর নেন নি। রুমি এখনও অসু¯’, চিকিৎসার অভাবে বাড়িতে অবস্থান করছেন। মাস অতিবাহিত হলেও তার পরীক্ষা বা চিকিৎসার উপায় কী ?
মৃত রাজ্জাক হাওলাদার- এর কন্যা রুমি। উপজেলা সদর বা¯‘হারা কলোনিতে তার খুপরি ঘরে বসবাস। মা মরিয়ম তার সকল দেখভাল করেন। প্রতিবন্ধী হওয়াতে এলাকাবাসী তার সাহায্যে এগিয়ে এসেছে বারবার। অসহায় বা প্রতিবন্ধী হিসাবে ছাড় পাননি বিদ্যালয় থেকে। প্রতিবেশীদের সহায়তায় ফরম ফিলাপ করেন তিনি।
মা মরিয়ম আক্ষেপ করে জানান, শিক্ষক প্রেমজিলাল দাস জানেন মেয়েটি অসু¯’, প্রতিবন্ধী। তার কদিন আগে অপারেশন করা হয়। যে কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত হতে পারেনি। গত ২ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে গেলে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ক্লাস নেন এবং তাকে বেদম মারপিট করে। একপর্যায় শিক্ষকের লাঠির আঘাতে তার অপারেশনস্থল ফেটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে সহপাঠীরা বাড়ি পৌঁছে দেয়। কি¯‘ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তাকে একটি বারও দেখতে আসেন নি।
অবসরপ্রাপ্ত অপর এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রেমজিলাল দাস অবসরে গেছেন ২ ফেবুয়ারি/১৯। তার বয়স হয়েছে ৬০এর অধিক। তার পরেও বিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়া, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করা,ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করা মেনে নেয়া যায় না। ইউএনও একটি কলেজপড়–য়া মেয়ের বাল্যবিয়ে বলে ভেঙ্গে দিতে পারেন, শতাধিক লোকের খাবার নষ্ট করে দিতে পারেন। অথচ একটি প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্য কোন উদ্যোগই নিতে পারছেন না তিনি। তার কাছে অভিযোগ করে প্রতিবন্ধী এই অসহায় কিশোরীকে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হ”েছ মাসাধিক কাল। এটা মেনে নেয়া যায় না। কর্তৃপক্ষ কিভাবে বিষয়টি দেখছেন তা তাদের জানা নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম এর সাথে আলাপকালে জানান, বিজয় দিবস এবং নানা কাজের কারণে তদারকি করতে দেরি হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন, ব্যবস্থা হবে। মেয়েটি প্রতিবন্ধী ভাতা পায়কি না, তা তার জানা নেই, তবে পাওয়া কথা। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রমজিলাল দাস ফোন দিলে রিসিভ করেন নি। স্কুল সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম জানান, তিনিও বিষটি সম্পর্কে অবগত। সমাধানের জন্য ক্ষতিগস্থ মেয়েটিকে বারবার ফোন করা হলেও তার কাছে আসেনি।
তাই ব্যবস্থাও নিতে পারেন নি। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকের ক্লাস নেয়া, ছাত্রীকে নিগ্রহ কতটুকু যুক্তিযুক্ত- এ বিষয়ে জানান, শিক্ষক নেই তাই তাকে দিয়ে বিদ্যালয় চালানো হচ্ছে। উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার জানান, মেয়েটি সমাজসেবায় প্রতিবন্ধী তালিকায় রয়েছে কি না, তা তার জানা নেই। খোজ নিয়ে বিষয়টি দেখবেন।
ইউএনও হিজলা জানান তিনি বিষয়টি অবগত রয়েছেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।