আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২৫
আপডেট:
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃঃ ঢাকার বিমানবন্দর থানার আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রেজা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলের ১৬ বছর দাবরিয়ে বেরিয়েছেন ঢাকা উত্তরা এলাকা। তৎকালীন ঢাকা- ১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান ও পরবর্তীতে সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরীর ছত্রছায়ায় উল্লেখিত নির্বাচনী আসনের উত্তরা, বিমানবন্দর ও দক্ষিণখান থানা একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে দাবরিয়েছে পুরো এলাকা। তৎকালীন ২ সংসদ সদস্যের ছত্রছায়া তাদের ক্ষমতা বলে উল্লেখিত এলাকার জমি ক্রয় -বিক্রয়ের টাকা, বাসা-বাড়ি নির্মাণের চাঁদাবাজি, ডেভেলপারদের কাছ থেকে ব্যবসায়িক অনৈতিক সুবিধা,ময়লার ব্যবসা সহ স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা রেখে সব ধরনের আর্থিক অনৈতিক সুবিধা নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট সাম্রাজ্য। গত বছর ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর বিমানবন্দর থানার আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রেজা গা ডাকা দিয়ে ঢাকা শহরে কোথাও আত্মগোপন করে আছেন বলে অনেকে দাবি করেন। বর্তমানে সোহেল রেজার পরিবার পরিজন দক্ষিণখান থানার কলেজ রোডের মদিনা টাওয়ারে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। তবে সোহেল রেজা মাঝে মধ্যে মদিনা টাওয়ারের ফ্ল্যাটে রাতে গোপনে পরিবার-পরিজনের সাথে সাক্ষাৎ করেন বলে মদিনা টাওয়ার সূত্র দাবি করেন। ৫ আগষ্ট এর পরবর্তী পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে ৮/৯ টি হত্যা সহ বিভিন্ন ধরনের মামলা দায়ের হয়েছেন। এর মধ্যে উত্তরা পূর্ব থানা মামলা নং -১৫, তারিখ ২৬/৯/২৪ ইং,ধারা ১৪৮/১৮৯/১২০/৩০২/৩৪ পেনাল কোড,আসামি নং ২৮৭,উত্তরা পশ্চিম থানা মামলা নং- ৮,তারিখ ২২- ৮-২৪ ইং,ধারা ১৪০/১৬৮/ ৩২৩/৩০২/১০৯/৩৪ পেনাল কোড,আসামি নং ১২৮, বিমানবন্দর থানা মামলা নং- জিআর ১৮০/২৪, আসামি নং-৭১, প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে ফ্যাসিস্টদের দোসর সন্ত্রাসী সোহেল রেজার একান্ত বিশ্বস্ত সহচর সিন্ডিকেট সদস্য সিটি কমপ্লেক্সের রেজাউল ও সজল আশকোনা সিটি কমপ্লেক্স সহ পুরো এলাকা দাবরিয়ে বেরাচ্ছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পদ-পদবি বিহীন আওয়ামী লীগ সমর্থক মোঃ সজল মুন্সিগঞ্জ জেলা নিবাসী, দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন শেষ করে সিটি কমপ্লেক্সে ফ্ল্যাট ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রেজার সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে সোহেল রেজার একান্ত বিশ্বস্ত সহচর ও তার দক্ষিণ হস্ত হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পান। অন্যদিকে বরিশাল নিবাসী রেজাউল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোরশেদুল আলম ও আওয়ামী-সমর্থিত ফেডারেশনের সভাপতি জসীমউদ্দীনের প্রতিষ্ঠানে বেঙ্গল গ্রুপের মার্কেটিংয়ে কর্মরত থেকে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবাহান চৌধুরীর ব্যবসায়িক পার্টনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এহসান গ্রুপের মার্কেটিং বিভাগে যোগদান করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ৫ ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর এই ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ফ্যাসিস্ট ও আওয়ামী লীগ সরকারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ভাঙচুর করা হয়েছে। বিমানবন্দর থানার আওয়ামী নেতা সন্ত্রাসী সোহেল রেজা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক প্রভাবে সিটি কমপ্লেক্সে আস্তানা গেড়ে বসেন। পরিচিত হয়ে রেজাউল সোসাইটির সভাপতি পদ দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য সোহেল রেজার সিন্ডিকেটের সদস্য বনে যান। তিনি সোহেল রেজাকে স্থানীয় কমিশনার নির্বাচনে সহায়তার মাধ্যমে সোসাইটির সভাপতি পদটি দীর্ঘস্থায়ী করার পরিকল্পনা নেন। এ প্রেক্ষিতে রেজাউল ও সজল গং আশকোনা সিটি কমপ্লেক্স সহ আশপাশ এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে সোহেল রেজার সাথে গোপন যোগাযোগ ও পরামর্শের মাধ্যমে রেজাউল সভাপতি ও সজল সাধারণ সম্পাদকের পদ সোসাইটি অ্যাক্টের বিধি- বিধান লংঘন করে জোরজবস্তি দখল করে নেন। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে কমপ্লেক্সের বাসিন্দা জুয়েল ও মাসুদ সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন,যা বর্তমানে অব্যাহত আছে। অভিযোগে জানা যায়, ইতোমধ্যে পদ-পদবি বিহীন দু,একজন বিএনপি সমার্থক রেজাউল ও সজলকে বিএনপি’র কর্মী ও সমর্থক হিসেবে এবং সিটি কমপ্লেক্সের ৫/৭ জন অরাজনৈতিক ফ্লাট মালিক কে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে উত্তরা এলাকায় বসবাসরত বিএনপি’র সংসদ সদস্য সম্ভাব্য প্রার্থী এবং সিনিয়র নেতাদের কাছে দৌরর্ঝাপ শুরু করেছেন। সিটি কমপ্লেক্সের ফ্লাট মালিক শাহ আলম বাদল বরাত সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে স্থানীয় বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল রেজা হঠাৎ করে সিটি কমপ্লেক্সে এসে শাহ আলম বাদলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং কলিজা উপড়ে ফেলে প্রাণ নাসের হুমকি প্রদান করেন। পরবর্তী পর্যায়ে সিটি কমপ্লেক্সের ফ্লাট মালিক ছায়ফুল আলমের মদিনা টাওয়ারের দোকান জবর দখল করে তালা মারার কারণে সার্বিক বিষয়ে আমলে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ দায়ের করেন আবেদনটি উত্তরা বিভাগের পুলিশের ডিসিকে শুরাহার করার জন্য মন্ত্রনালয় নির্দেশ প্রদান করেন। এই প্রেক্ষিতে স্থানীয় দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বিষয়টি হস্তক্ষেপ করে সিটি কমপ্লেক্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলামকে ফোন করে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যান। পরে এস এম রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তোফাজ্জল চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় তার বাসভবনে বিষয়টি সমাধানের জন্য সোহেল রেজার সাথে কয়েক দফা বৈঠক হয়। কিছু বিষয় ঐক্যমত হলেও ফ্লাট মালিক ছায়ফুল আলমের মদিনা টাওয়ারের দোকানটি জবর দখলের হাত থেকে উদ্ধার করা যায়নি। অন্যদিকে ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর সোহেল রেজার প্রতিপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান জেল থেকে মুক্তি পান। হান্নানের স্ত্রী বাদী হয়ে নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞত নামা প্রায় শতাধিক আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন । এ প্রেক্ষিতে সিআইডি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে, যা বর্তমানে অব্যাহত। সিটি কমপ্লেক্সে বসবাসরত কয়েকজনকে আসামি করা কারণে আসামির অভিভাবকরা সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলামের দ্বারস্থ হলে তিনি বিষয়টি সূরাহার জন্য হান্নানের সাথে দু’একবার মতবিনিময় করে চার্জশিট থেকে সিটি কমপ্লেক্সের বাসিন্দাদের নাম বাদ দেওয়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। তবে সিটি কমপ্লেক্সের বাসিন্দাদের এ মামলার চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি সিআইডি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এ কারণে রেজাউল, সজল ও বিএনপি সমার্থক দু একজন লোক এই দুইটি বিষয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে অপপ্রচার দিয়ে যাচ্ছেন বলে এলাকাবাসী দাবি করেন।এ ব্যাপারে এস এম রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে তার মতামত নিতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন। আশকোনা সিটি কমপ্লেক্সের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সিটি কমপ্লেক্স স্বার্থরক্ষা কমিটির আহবায়ক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন সুত্র বরাত দিয়ে বলেন, রেজাউল ও সজল সোসাইটির বিধি-বিধান লংঘন করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে অনিয়ম ও এক নায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন, তারা মূলত সোহেল রেজার এজেন্ডা বাস্তবায়নের তৎপর। আশকোনা সিটি কমপ্লেক্সের স্বার্থ রক্ষা কমিটির যুগ্ন -আহবায়ক শাহাবুদ্দিন নয়ন সূত্র বরাত দিয়ে বলেন, রেজাউল ও সজল সিটি কমপ্লেক্স সোসাইটির বিধি- বিধান লঙ্ঘন করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে কমপ্লেক্সের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা কমপ্লেক্স বাঁশি ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্ত অন্যায় অনিয়ম প্রতিহত করব।