২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

আগামী ছয় মাস অর্থ ব্যয়ে কঠোর বার্তা

আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০২২

বিজয় নিউজ:: মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বরাদ্দের বাইরে সরকার অতিরিক্ত কোনো অর্থ দেবে না। অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) অনুমোদনবিহীন নতুন কোনো প্রকল্পের জন্য টাকাও চাওয়া যাবে না।

এ ছাড়া প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ ব্যয় দেখানো যাবে না অন্য কোনো খাতে। সাশ্রয়ের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে প্রকল্পের সংখ্যাও কমাতে হবে। প্রয়োজনে ধীরগতির প্রকল্প থেকে অর্থ কেটে দ্রুতগতির জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে যোগান দিতে হবে। অর্থ বিভাগ থেকে ১৩ ডিসেম্বর এ ধরনের নির্দেশনাসহ আরও বেশ কিছু নীতি ও গাইডলাইন দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়।

এদিকে জারিকৃত এই পরিপত্র অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করে অর্থ বিভাগে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই পরিপত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যাত্তোর পুনর্বাসন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র মাহবুব আহমেদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘অর্থ বিভাগের বাজেট পরিপত্রটি সময়োপযোগী। এখন একটি সঙ্কটময় পরিস্থিতি পার করছে বিশ্বসহ বাংলাদেশ। এসব বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অর্থ বিভাগের নির্দেশনা মানতে হবে। কৃচ্ছ সাধনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। না হলে এ নির্দেশনা কাজে আসবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যয় তখনই বাড়ানো সম্ভব, যদি আয় বাড়ে। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় খুব বেশি বাড়বে না। ফলে চাইলেও আমরা অতিরিক্ত ব্যয় করতে পারব না।’ তার মতে, কৃচ্ছ সাধনের পাশাপাশি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে রাজস্ব আয় বাড়ানোর দিকে।

অর্থ বিভাগের বাজেট পরিপত্রে মোটা দাগে চারটি নির্দেশনাসহ ৩১টি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, পরিপত্র অনুযায়ী অর্থ বিভাগ একটি সংশোধিত বাজেট (২০২২-২৩) প্রণয়ন করবে। এ জন্য ১৯ ডিসেম্বর বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা শেষে ওই বৈঠকে এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা চূড়ান্ত করা হবে।

অর্থ বিভাগের পরিপত্রে আরও কয়েকটি মৌলিক নির্দেশনা রয়েছে। যেমন-সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা, মন্ত্রণালয়/বিভাগের নিজস্ব নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে অর্থ ব্যয়ের সংস্থান করা, যা মূল বরাদ্দের চেয়ে বেশি হবে না। এ ছাড়া মূল বাজেটে অন্তর্ভুক্ত ছিল না এমন কোনো নতুন সম্পদ সংগ্রহের জন্য অর্থ ব্যয় করা যাবে না।

এ ছাড়া এ বছর যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হবে সে ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, বৈদেশিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের অনুকূলে সরকারি অংশের প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি এ সময় গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত খাতগুলোকে।

তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হবে না। কেননা, আয়ের চেয়ে যদি ব্যয় বেশি হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট নিয়ে বেশিদূর এগুনো সম্ভব হবে না। বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে ইতোমধ্যে আমদানিতে লাগাম পড়েছে। শিল্পউদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। এর প্রভাব পড়বে সরকারের রাজস্ব আয়ের ওপর। এমনকি ব্যক্তিকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে না

এদিকে সূত্র জানায়, সম্ভাব্য নেতিবাচক সূচকগুলো বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বিভাগ থেকে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসাবে বাজেট পরিপত্র জারি করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকে মনে করেন, তাদের বেঁধে দেওয়া গাইডলাইনগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান এই পরিস্থিতি অনেকাংশে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এজন্য চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনের জন্য বিগত দুই অর্থবছর এবং চলতি অর্থবছরের বিগত ৪-৫ মাসের রাজস্ব আদায়ের চিত্র পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

অপর দিকে কৃচ্ছ সাধনের আওতায় কোনো প্রকার যানবাহন কেনা ও ভ্রমণ খাতে ব্যয় বন্ধ রাখাসহ অ্যাপায়ন ব্যয়সহ এ ধরনের ছোটখাটো খাতে খরচ ৫০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না। এছাড়া অকটেন, পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট, গ্যাসসহ জ্বালানি খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বড় ধরনের কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এ বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হয়। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের মূল্য বৃদ্ধিজনিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান উল্লেখযোগ্য।

তবে বছরের মাঝামাঝি এসে বৈশ্বিক সংকটের প্রবল ধাক্কার মুখে পড়ে অর্থনীতি। এতে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় জুন পর্যন্ত অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে ব্যয় কমানোর পথ বেছে নিতে অর্থ বিভাগ এ পরিপত্র করেছে।

60 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন