৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ডিবি পরিচয়ে আসামির মায়ের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারক

আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০১৯

প্রতারক

ইয়াবা সেবনের অভিযোগে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুজন আহমেদ (২৭) নামে এক যুবককে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইয়াবা মামলায় আসামি দেখিয়ে বুধবার তাকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে।

তবে ডিবি পরিচয়ে এক প্রতারক আটক সুমন আহমেদকে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেয়ার পর থেকে ওই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। এদিকে ছেলে ছাড়া পাবে এ আশায় মা সেতারা খাতুন সকাল থেকে ডিবি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রিজন ভ্যানে ছেলেকে উঠানোর সময় আহাজারি করতে থাকেন তিনি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সেতারা খাতুন বলেন, সন্ধ্যায় সুমনকে আটক করে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে পুলিশ। রাত ১০টার দিকে সুমন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে বিষয়টি আমাদের জানায়। ছেলেকে দেখতে সকাল সাড়ে ৭টার (বুধবার) দিকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে আসি। সুমনকে কিভাবে ছাড়িয়ে নেয়া যায় সে ব্যাপারে উপস্থিত লোকজনের কাছে পরামর্শ নিতে থাকি। এরই মধ্যে ০১৯৯৭-৩৮৭২৫৩ থেকে আমার ফোনে রিং আসে। নিজেকে ডিবির সদস্য দাবি করে টাকা দিলে সুমনকে ছেড়ে দেবে বলে জানায়। কত টাকা দিতে হবে জানালে সে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। শর্ত হিসেবে আমি ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এর কিছু পরে ওই নম্বর থেকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে আমাকে টাকা দিতে বলে। টাকা না দিলে হেরোইনের মামলায় চালান দেবে বলে জানায়। ছেলের কান্না ভেবে আমি টাকা দিতে রাজি হই। এরপর ০১৯৬৭-৬২২৩২৩ নম্বরটি দিয়ে বিকাশ করে টাকা পাঠাতে বলা হয়।

সেতারা খাতুন বলেন, ‘ছেলেকে ছেড়ে দেবে এই ভেবে দশ হাজার টাকা বিকাশ করে দেই। এর কিছু পরে ডিবি পরিচয়ের ওই ব্যক্তির কাছে ফোন করলে তার নম্বর বন্ধ পাই। যে নম্বরটিতে টাকা পাঠিয়েছি তাতে যোগাযোগ করলে সেটি একটি বিকাশের এজেন্ট নম্বর বলে জানায়।’ পরে যুগান্তরের পক্ষ থেকে ০১৯৬৭-৬২২৩২৩ এ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এটি একটি বিকাশের এজেন্ট নম্বর বলে জানায়। এজেন্ট মালিকের নাম ইলিয়াস।

জানতে চাইলে বিকাশের এজেন্ট ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমার দোকানটি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের পেছনে। এখানে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। অনেকে টাকা পাঠান। কে পাঠিয়েছে এবং উঠিয়েছে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে এ সংক্রান্ত তথ্য চাইলে আমি দিতে রাজি আছি।’

এ ঘটনার পর ছেলেকে ছেড়ে দেবে এ আশায় সকাল থেকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করতে থাকা সেতারা খাতুন হতাশ হয়ে পড়েন। ছেলেকে যখন ডিবি কার্যালয় থেকে বের করে তখন তার দুই হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো ছিল। ছেলেকে দেখতে পেয়ে ছুটে যান তিনি। এ সময় ডিবি পুলিশকে টাকা দেয়ার কথা ছেলেকে জানালে কাকে টাকা দিয়েছ তা জানতে চায় ছেলে।

তখন সেতারা খাতুন বলেন, তুমিই তো কান্নাকাটি করে ডিবিকে টাকা দিতে বললে। এ সময় সুমন জানায়, ‘তোমার সঙ্গে তো আমার কোনো কথাই হয়নি।’ এর মধ্যে নীল রংয়ের আসামি বহনকারী প্রিজন ভ্যান চলে এলে সুমন আহমেদকে তাতে উঠতে বাধ্য করে পুলিশ। এ সময় একমাত্র ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে তিনি পুলিশের হাতে ধরে আহাজারি করতে থাকেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে আসামি ছেড়ে দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই বলে জানানো হয়। পরে তিনি চোখ মুছতে মুছতে প্রিজন ভ্যানের পেছনে দৌড়াতে থাকেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোখলেছুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এটা প্রতারণার একটি নতুন কৌশল। ডিবির নাম ভাঙিয়ে যারা এ ধরনের কার্যক্রম করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করবে ডিবি। ডিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, জনসাধারণকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই ডিবি পুলিশ অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেফতার করছে না। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এখানে আসামিদের আনা হয়; পরে যাচাই-বাছাই শেষে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে শুধু আইনের হাতে তুলে দেয়া হয়। এজন্য অহেতুক কাউকে টাকা না দিতে তিনি আহ্বান জানান।

613 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন