৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

খাগড়াছড়ির নতুন ঝরনা

আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২০

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: পাহাড়, নদী, উপত্যকা, ঝরনা আর ঝিরি নিয়ে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি। দেশের এই পাহাড়ি অঞ্চল পর্যটকদের কাছে বরাবরই দারুণ আকর্ষণীয়।

পাহাড়ের পর পাহাড়ে সাজানো এই চিরসবুজ অরণ্য দেশের যে কোনো অঞ্চল থেকে এই জনপথকে আলাদা করেছে। এর ভূপ্রাকৃতিক গঠন স্বাতন্ত্র্য এলাকা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। চিররহস্যভূমির এই জনপদ যেমন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়, তেমনি এটি স্থানীয়দের কাছে ‘ভূস্বর্গ’।

খাগড়াছড়িতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের আগমন। এরই মধ্যে জেলার দীঘিনালা সীমানাপাড়ায় সন্ধান মিলেছে প্রায় শতফুট উঁচু ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনা।

অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে নিতে নতুন সন্ধান পাওয়া ঝরনা দেখতে স্থানীয় পর্যটক ছাড়াও বাইরে থেকে আসছেন অনেকে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও গাইড সুবিধা দিচ্ছেন স্থানীয়রা।

খাগড়াছড়ি দীঘিনালার সীমানাপাড়ায় সন্ধান মিলেছে নতুন ঝরনা ‘তুয়ারি মাইরাং’। লোকালয় থেকে হেঁটে ঝরনায় পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। উঁচু-নিচু পাহাড়ে এখন চোখ ধাঁধানো সবুজ জুম। জুমের ল্যান্ডস্কেপজুড়ে সবুজ মখমল। কাছে ও দূরে ছোট ছোট জুমঘর। বন্যপ্রাণী থেকে জুমের ফসল বাঁচাতে জুমিয়ারা জুমঘর বানান।

আগে জুমিয়ারা ফলনের মৌসুমে জুমের ফসল পাহারায় জুমঘরে রাতযাপন করতেন। বর্তমানে বন্যপ্রাণীর উৎপাত কম হওয়ায় অনেক জুমিয়া রাতে থাকেন না। জুমের পাহাড়জুড়ে এখন সবুজ ধান, ভুট্টা, মারফা, হলুদসহ বিবিধ ফসলের বাহার।

ঝরনায় যেতে জুমের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। পাহাড় থেকে নামতে হয় প্রাকৃতিক লতা বেয়ে। কয়েকটি পাথুরে জায়গা পারাপারে একমাত্র ভরসা সেই লতা।

তবে এসব জায়গা মোটা দড়ি ব্যবহার করা ঝুঁকিমুক্ত। পাহাড় থেকে লতা বেয়ে নেমে হাঁটতে হয় পাহাড়ি ঝিরিতে। ঝিরির দুই পাশে উঁচু উঁচু টারশিয়ান যুগের পাহাড়।

পাহাড়ি ঝিরিতে গা ছম ছম অনুভূতি। ঝিরিতে শতবছর ধরে আটকে আছে বড় বড় পাথর খণ্ড। পাথর ও ক্যাসকেড বেয়ে নামছে পানির স্রোত। উঁচু পাহাড় আর গভীর অরণ্যের কারণে ঝিরি পর্যন্ত পৌঁছে না সূর্যের আলো। পথে পথে আরও কয়েকটি ঝরনা দেখা যায়।

তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় সেসব ঝরনায় তেমন পানি নেই। ঝিরি পথে হাঁটার পর দেখা মিলে সুবিশাল ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনার। শীতল ঝিরি পথের শেষে পাথরের পাহাড় বেয়ে নামছে ‘তুয়ারি মাইরাং’। এত উঁচু ঝরনা দেখে চোখ আটকে যাবে যে কারও। ঝরনার উল্টো দিকে পাথুরের পাহাড়। এমন ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে ‘তুয়ারি মাইরাং’-এ বেড়াতে এসেছে নেচার ট্র্যাভেলস বাংলাদেশ। বেড়াতে আসা পর্যটক মারিয়া, মুশফিকা, শান্তু জানান, করোনার মধ্যে দীর্ঘদিন যান্ত্রিক জীবনে আটকে ছিলাম। ‘তুয়ারি মাইরাং’ ঝরনা দেখতে এলাম। যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তারা আসতে পারবেন।

ঝরনার আসা পথ অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। যারা পাহাড়ে আসতে পছন্দ করেন, ঝরনা পছন্দ– এটি তাদের বেশ ভালো একটি জায়গা। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি কাটাতেই খাগড়াছড়িতে আসা। নতুন একটা ঝরনা ‘তুয়ারি মাইরাং’। এখানে প্রাকৃতিক অনুভূতি আছে।

নেচার ট্র্যাভেলস বাংলাদেশের টিম লিডার ডা. মইনুল হাসান জানান, ‘তুয়ারি মাইরাং’ বেশ অত্যন্ত সুন্দর ঝরনা। এর চারপাশটা বেশ রোমাঞ্চকর। পুরো পথজুড়ে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও ঝিরি এবং ক্যাসকেড বেয়ে নামতে হয়। এ সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। বন্ধুর পথ পেরিয়ে ঝরনা দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।

পর্যটকদের যাতায়াতে অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আগত পর্যটকদের গাইড সুবিধাও দেবেন তারা।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হতেন ত্রিপুরা জানান, ‘তুয়ারি মাইরাং’ নতুন ঝরনা। স্থানীয়রা বেড়াতে এলেও বাইরের পর্যটকরা খুব একটা আসেননি। যাতায়াতের পথ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তাসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে দিলে সুবিধা হবে। পর্যটক বেড়াতে এলে গাইড সুবিধা দেয়া যাবে।

ঝরনায় যাতায়াতে অবকাঠামো উন্নয়নের কথা জানিয়েছেন দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ উল্লাহ।

তিনি জানান, দীঘিনালায় তৈদুছড়া ঝরনা, বাঁদুড় গুহাসহ বেশ কিছু পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। তবে দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থার কারণে পর্যটকদের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। ‘তুয়ারি মাইরাং’ পর্যটকদের কাছে এটি নতুন আকর্ষণ হতে পারে। ট্রেকিং প্রিয় পর্যটকরা এটি ঘুরে আসতে পারেন।

216 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন