২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

স্বস্তি ফিরছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে

আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০১৯

শফিক মুন্সি(ববি)সংবাদদাতা::  নাজমুল হাসান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া এবং রুটিন দায়িত্বে থাকা সকল উপাচার্যকেই দেখার সুযোগ পেয়েছেন।

তবে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ পাওয়া সাবেক দুজন উপাচার্য এবং উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা ট্রেজারারের চেয়ে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন তার চোখে ধরা দিয়েছে একটু অন্যরকম ভাবে। এই শিক্ষার্থীর মতে, গত ছয় বছরে এই অঞ্চলে একাধিক প্রাকৃতিক দূর্যোগ সংঘটিত হলেও কোন উপাচার্যকে ১০ নং বিপদ সংকেত উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটে আসতে দেখেন নি তিনি।

 

মাত্র কদিন আগে বরিশালের বুকে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর সময়টিতে ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন ছুটে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির হলগুলোতে। দুর্যোগকালীন মুহূর্তে পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন সকল আবাসিক শিক্ষার্থীর।

সাবেক উপাচার্য ড. ইমামুল হকের বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের দরুন বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ পদটি দীর্ঘদিন ছিল শূন্য।

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে প্রায় ছয়মাস সাবেক ট্রেজারার ড. এ কে এম মাহবুব হাসান বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু মেয়াদপূর্তিতে সেই ভার ট্রেজারারের কাঁধ থেকে নেমে গেলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুরু হয়েছিল অভিভাবকহীনতার নানা সংকট।

এবছরের স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হবার সাথে সাথে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে শুরু হয়েছিল অস্বস্তি। উপাচার্যহীনতায় যেমন শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার রেজাল্ট আটকে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল সেশনজট তেমনি উপক্রম হয়েছিল শিক্ষক – কর্মকর্তাদের বেতন বন্ধের। এমন তীব্র সংকটময় মুহূর্তে গত ৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন।

যোগদানের পরদিনই স্থগিত হওয়া ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি৷ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ ধার্য করার ফলে অনিশ্চিত হয়ে পরা একাডেমিক বর্ষে ফিরেছে ধারাবাহিকতার নিশ্চয়তা।

বেতন নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাঝে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তারও সমাধান করেছেন তিনি। প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এতদিন ছিল শূন্য অবস্থায়। দ্রুততার সাথে রেজিস্ট্রার পদে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. মুহাম্মদ মুহসিন উদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়ে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এনেছেন নতুন উপাচার্য। যোগদানের পরদিনই আবাসিক হলগুলোতে গিয়ে সার্বিক খোঁজ খবর নেন শিক্ষার্থীদের।

ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল ‘ আঘাত হানার সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটে যাবার সাহসিকতা দেখিয়ে অনেক দিন পর ভালো খবরের শিরোনাম করতে পেরেছেন প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য পদটিকে।

নতুন উপাচার্য নিয়োগে স্বস্তি ফেরার কথা জানিয়েছেন শিক্ষক – কর্মচারীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ইবরাহিম মোল্লা বলেন, নতুন উপাচার্যের যোগদানে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে যে ধীরগতি ছিল তা কেটে গেছে।

যোগদানের প্রথমদিনই তিনি আমাদের আটকে থাকা বেতন-ভাতা পরিশোধে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এছাড়া দ্রুততার সাথে আমাদের সকলের সঙ্গে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা গুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল দপ্তরগুলো আগের চেয়ে বেশি কার্যকর করার ব্যাপারেও তিনি ভূমিকা রাখছেন।

দীর্ঘদিন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় প্রশাসনিক পর্যায়ে যে অচলায়তন সৃষ্টি হয়েছিল তা কাটতে শুরু করেছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ। তিনি বলেন, কয়েকমাস অভিভাবক শূন্য থাকায় যেসব স্থবিরতার সম্মুখীন আমরা হয়েছিলাম নতুন উপাচার্যের যোগদানের ফলে তা কাটতে শুরু করেছে।

তিনি ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকর্তা – কর্মচারীদের নিয়ে বসেছেন, তাদের দুর্দশার কথা শুনেছেন। আশাকরি প্রশাসনিক সমস্যাগুলোর সমাধানে তিনি যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবেন।

129 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন