আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২৫
 
                        শাহজাহান খান বাবুগঞ্জ (বরিশাল) ঃঃ বরিশাল জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসনটি বরাবরই আলোচনায়। স্থানীয় রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে এ আসনটি বারবার আলোচনায় উঠে আসে। এর কারণ আসনটি ঘিরে হেভিওয়েটদের লড়াই শুরু হয় প্রতি নির্বাচনেই। এবারও ব্যাতিক্রম নয়। ফ্যাসিবাদী খ্যাতি পাওয়া সংগঠন আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী হেভিওয়েটদের আলাদা আলাদা মিটিং মিছিল গণসংযোগ করে ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে বিএনপি একাধিক প্রার্থী নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর একক প্রার্থী নির্বাচনে বিজয় লক্ষে মাঠে কাজ করছেন।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিক বেগম সেলিমা রহমান,কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন,কেন্দ্রীয় আইনজীবী ফোরামের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ, জেলা বিএনপি সদস্য ও সাবেক মেয়র আব্দুস সাত্তার খান। চারজন প্রার্থী ঘিরে বরিশাল ৩ আসনে বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত।সেলিমা রহমানের পক্ষে রয়েছেন ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ ও আব্দুস সাত্তার খান। অপরদিকে এডভোকেট জয়নাল আবদিনের পক্ষে রয়েছে বিএনপির একাংশ। তারি ধারাবাহিকতায়
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র একাংশ ত্রিবাষিক সম্মেলনের করার চেষ্টা করলেও দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি ।সবার মধ্যে কৌতূহল- কার হাতে উঠবে ধানের শীষের ঝাণ্ডা? দলের হাইকমান্ড কি আস্থা রাখবে সেলিমা রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পারিবারিক ঐতিহ্যের ওপর? নাকি বেছে নেবে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের আইনি লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আর তৃণমূলে দলের নিয়ন্ত্রণকে?
বেগম সেলিমা রহমান কেবল একজন রাজনীতিবিদই নন, তিনি এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকারী। তার বাবা বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার। তার ভাইদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচিত নাম জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও প্রখ্যাত সাংবাদিক এনায়েতউল্লাহ খান।সেলিমা রহমানের আপন ভগ্নিপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ছিলেন ১৯৯১ সালের বিএনপির আমলে দেশের রাষ্ট্রপতি। এমন এক পরিবারে বেড়ে ওঠা সেলিমা রহমান ।বিএনপির দুঃসময়ের কান্ডারি হিসেবে পরিচিত সেলিমা রহমান আগে ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ভাইস-চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য। ২০০১ সালের বিএনপি সরকারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগ আমলে বারবার ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়েছেন। গাড়ি পোড়ানো, পুলিশকে মারধরের মতো ‘ভৌতিক’ মামলায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস করেছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তার ত্যাগ প্রশ্নাতীত। বাবুগঞ্জের সন্তান হওয়ায় এলাকার মানুষের সাথেও রয়েছে তার নাড়ির টান। অপরদিকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান, আইন অঙ্গনের পরিচিত মুখ।
২০১৮ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে জয়নুল আবেদীন ছিলেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। বর্তমানে বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা বিএনপির কমিটিতে তার অনুসারীদের রয়েছে শক্ত অবস্থান।
এই দুই হেভিওয়েট নেতার পক্ষে-বিপক্ষে বাবুগঞ্জ-মুলাদী বিএনপির নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, একই দিনে একই উপজেলায় পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন এই দুই নেতা। ২০২৪ সালে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে সুলতান আহমেদ খানকে আহবায়ক ও ওয়াহিদুল ইসলাম প্রিন্স কে সদস্য সচিব করে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে এখন দুটি পক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ খান । অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ইসরত হোসেন কচিতালুকদার।
সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইসরাত হোসেন কচি জানান , বিগত ১৭ বছর রাজপথে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হামলা, মামলা ও কারাবরণকারী নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করে বাবুগঞ্জের ৬ টি ইউনিয়নের বির্তকিত ও বিলুপ্ত কমিটি পুনর্বহাল করেনবিএনপিতে গ্রুপের কারণে কর্মীরা বিভ্রান্ত। , বরিশাল-৩ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারি কে হচ্ছেন?বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওয়াহিদুল ইলসলাম প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘দল যাকেমনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করব। আমাদের কাছে জরুরি হচ্ছে ধানের শীষ।’