১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

মোবাইলের লোভে হাত-পা বেঁধে শিশুকে পানিতে ফেলে দেয় সাইমিন

আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২০

ইসমাইল হোসেন বিদয়।                                                                       ফাইল ছবি

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:: বিদেশ থেকে পাঠানো মোবাইল ফোনের লোভে শিশু ইসমাইল হোসেন বিদয়কে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে পানিতে ফেলে দেয় পাশের বাড়ির কিশোর শাহরিয়ার মারুফ ওরফে সাইমিন।

হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে বুধবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাইমিন।

রাতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ।

আদালতে সাইমিন জানায়, পার্শ্ববর্তী বাড়ির নিহত ইসমাইল হোসেন বিদয়ের হাতে একমাস পূর্বে একটি বিদেশি ক্যামেরা মোবাইল সেট সে দেখে। মোবাইল সেটটি তার বাবা বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন। মোবাইল সেট নিয়ে বিদয় নদীর পাড়ে তার সহপাঠীদের ছবি তোলে।

সে জানায়, ওই মোবাইল সেটের প্রতি সাইমিনের প্রচণ্ড লোভ হয়। এ কারণে সে বিদয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে ১০ জানুয়ারি বিকালে সাইমিন শহরের পোদ্দারবাড়ি এলাকায় নাটক দেখার জন্য বিদয়কে প্রস্তাব দেয়। বিদয়কে মোবাইল সেট দিয়ে নাটকের ছবি ও ভিডিও করার পরামর্শ দেয়। এতে সে রাজি হয়।

সাইমিন জানায়, সেই অনুযায়ী সে বিকাল ৪টার দিকে বিদয়কে নিয়ে রওনা হয়। তারা ধুলিয়াখাল-মিরপুর রোডের মশাযান ব্রিজের পর সিএনজি থেকে নামে। বিদয়কে নিয়ে সে তার নানা বাড়ি চরহামুয়া নোয়াবাদ যাওয়ার জন্য নদীর বেড়িবাঁধ দিয়ে রওয়ানা হয়।

সে জানায়, চরহামুয়া গ্রামের নদীর বেড়ি বাঁধে গিয়ে নদীর চড়ে সবজি ও শস্যক্ষেত দেখে সে নদীর ধারে গিয়ে ছবি তুলতে বলে। বিদয় নদীর কিনারায় যায়। নাটকের মতো অভিনয় করে সে কলাগাছের ছোলা দিয়ে বিদয়ের দুই হাত সামনে দিয়ে বাঁধে, পা দুইটিও বাঁধে।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছবি তোলার ভান করে নদীর পাড়ে একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে বিদয়ের মাথায় কয়েকটি বাড়ি মারে সে। এতে বিদয় মারাত্মক আহত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে বিদয়কে ধাক্কা মেরে খোঁয়াই নদীর পানিতে ফেলে দ্রুত মোবাইল ফোনটি নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যায় বলে আদালতে সাইমিন জানায়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বিদয়ের মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাইমিন উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন অনুতপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম, ডিআই-১ কাজী কামাল উদ্দিন, সদর মডেল থানার ওসি মো. মাসুক আলী, এসআই মো. সাহিদ মিয়া প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি উত্তর তেঘরিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন বিদয় (১০) পোদ্দারবাড়ি এলাকায় নাটক দেখার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী শাহরিয়ার মারুফ ওরফে সাইমিন। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত বিদয় বাড়িতে ফিরে না আসায় তার মা ও চাচারা বিদয়ের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পান।

আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে মা শাহেনা আক্তার ওই দিন সদর মডেল থানায় এসে একটি সাধারণ ডায়রি করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে নিখোঁজের সংবাদও প্রচার করা হয়। পুলিশও তাকে খুঁজতে থাকে।

১৩ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের চরহামুয়া গ্রামের পাশে খোয়াই নদীর কিনারায় পানিতে একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। বিষয়টি থানায় অবহিত করলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. রবিউল ইসলাম, সদর থানার ওসি মো. মাসুক আলী, পরিদর্শক (অপারেশন) দৌস মোহাম্মদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে।

পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরা লাশটি ইসমাইল হোসেন বিদয়ের বলে শনাক্ত করেন। নিহতের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।

মোবাইলের লোভে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে শিশুকে পানিতে ফেলে দেয় সাইমিন

ইসমাইল হোসেন বিদয়। ফাইল ছবি

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
বিদেশ থেকে পাঠানো মোবাইল ফোনের লোভে শিশু ইসমাইল হোসেন বিদয়কে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে পানিতে ফেলে দেয় পাশের বাড়ির কিশোর শাহরিয়ার মারুফ ওরফে সাইমিন।

হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে বুধবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাইমিন।

রাতে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ।

আদালতে সাইমিন জানায়, পার্শ্ববর্তী বাড়ির নিহত ইসমাইল হোসেন বিদয়ের হাতে একমাস পূর্বে একটি বিদেশি ক্যামেরা মোবাইল সেট সে দেখে। মোবাইল সেটটি তার বাবা বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন। মোবাইল সেট নিয়ে বিদয় নদীর পাড়ে তার সহপাঠীদের ছবি তোলে।

সে জানায়, ওই মোবাইল সেটের প্রতি সাইমিনের প্রচণ্ড লোভ হয়। এ কারণে সে বিদয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে ১০ জানুয়ারি বিকালে সাইমিন শহরের পোদ্দারবাড়ি এলাকায় নাটক দেখার জন্য বিদয়কে প্রস্তাব দেয়। বিদয়কে মোবাইল সেট দিয়ে নাটকের ছবি ও ভিডিও করার পরামর্শ দেয়। এতে সে রাজি হয়।

সাইমিন জানায়, সেই অনুযায়ী সে বিকাল ৪টার দিকে বিদয়কে নিয়ে রওনা হয়। তারা ধুলিয়াখাল-মিরপুর রোডের মশাযান ব্রিজের পর সিএনজি থেকে নামে। বিদয়কে নিয়ে সে তার নানা বাড়ি চরহামুয়া নোয়াবাদ যাওয়ার জন্য নদীর বেড়িবাঁধ দিয়ে রওয়ানা হয়।

সে জানায়, চরহামুয়া গ্রামের নদীর বেড়ি বাঁধে গিয়ে নদীর চড়ে সবজি ও শস্যক্ষেত দেখে সে নদীর ধারে গিয়ে ছবি তুলতে বলে। বিদয় নদীর কিনারায় যায়। নাটকের মতো অভিনয় করে সে কলাগাছের ছোলা দিয়ে বিদয়ের দুই হাত সামনে দিয়ে বাঁধে, পা দুইটিও বাঁধে।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছবি তোলার ভান করে নদীর পাড়ে একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে বিদয়ের মাথায় কয়েকটি বাড়ি মারে সে। এতে বিদয় মারাত্মক আহত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে বিদয়কে ধাক্কা মেরে খোঁয়াই নদীর পানিতে ফেলে দ্রুত মোবাইল ফোনটি নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যায় বলে আদালতে সাইমিন জানায়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বিদয়ের মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাইমিন উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন অনুতপ্ত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম, ডিআই-১ কাজী কামাল উদ্দিন, সদর মডেল থানার ওসি মো. মাসুক আলী, এসআই মো. সাহিদ মিয়া প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি উত্তর তেঘরিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন রিদয় (১০) পোদ্দারবাড়ি এলাকায় নাটক দেখার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী শাহরিয়ার মারুফ ওরফে সাইমিন। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত বিদয় বাড়িতে ফিরে না আসায় তার মা ও চাচারা বিদয়ের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পান।

আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে মা শাহেনা আক্তার ওই দিন সদর মডেল থানায় এসে একটি সাধারণ ডায়রি করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে নিখোঁজের সংবাদও প্রচার করা হয়। পুলিশও তাকে খুঁজতে থাকে।

১৩ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের চরহামুয়া গ্রামের পাশে খোয়াই নদীর কিনারায় পানিতে একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। বিষয়টি থানায় অবহিত করলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. রবিউল ইসলাম, সদর থানার ওসি মো. মাসুক আলী, পরিদর্শক (অপারেশন) দৌস মোহাম্মদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে।

পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরা লাশটি ইসমাইল হোসেন বিদয়ের বলে শনাক্ত করেন। নিহতের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় নিহত বিদয়ের চাচা মো. টেনু মিয়া বাদী হয়ে মঙ্গলবার অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় সদর মডেল থানার ওসি মো. মাসুক আলীকে।

129 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন